রাজশাহী: অবশেষে মহানগরের আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকায় নির্মাণাধীন বাইপাস সড়কের প্রবেশমুখে পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাতের মধ্যেই ক্রেনের সাহায্যে যুদ্ধ বিমানটি বসানো হবে নির্মিত স্ট্যান্ডের ওপর।
গত বছরের নভেম্বর মাসে এই যুদ্ধবিমানটি মহানগরের সিএনবির মোড় থেকে নামিয়ে আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধবিমানটি নির্মাণাধীন সড়কের ওপর কাদা মাটিতে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে যুদ্ধবিমানটি রং করা এবং বিভিন্ন অংশ জোড়া দিয়ে বিমানটি প্রতি স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়।
গত তিনদিন থেকে কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার তা প্রতিস্থাপনের কাজ শেষের পথে।
চট্টগ্রাম থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বাবুই’ আর্কিটেকচারের ২১ সদস্যের দল যুদ্ধবিমানটি বসানোর কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে যশোর থেকে আসা বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে এই কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ‘বাবুই’ আর্কিটেকচার ফার্মের ওনার এস এম কুতুব উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে যুদ্ধবিমানটি প্রতিস্থাপন এবং এই চত্বরটি বিউটিফিকেশনের কাজ পেয়েছেন তারা কাজটি এবছরের জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এজন্য রাজশাহী সিটি করপোরশনের কাছে এই প্রকল্পের মেয়াদ এক্সটেনশন করার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
এস এম কুতুব উদ্দিন আরও বলেন, এখন শুধু যুদ্ধবিমান স্ট্যান্ডের ওপর তুলে দেওয়া হবে। এরপর তারা চলে যাবেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন কাজটির মেয়াদ বাড়ালেই আসবেন এবং আলিফ-লাম-মীম ভাটা এলাকার এই চত্বরের বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু করবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এই কাজটি চলছে এটা ঠিক। তবে তিনি নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তাই এই বিষয়টি পুরোপুরি তার জানা নেই। ঠিকাদার চিঠি দিয়ে থাকলে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রধান প্রকৌশলী।
মহানগরীর 'রাজশাহী-নওগাঁ থেকে মোহনপুর, রাজশাহী-নাটোর সড়ক, পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে ক্রসিংয়ের ওপর র্যামসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
২০২.৫০ মিটারের ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের র্যাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। এর সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিফ-লাম-মীম ভাটা থেকে বিহাস পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এ সড়কের প্রবেশ মুখেই বসানো হচ্ছে যুদ্ধবিমানটি। আর এর মধ্যে দিয়েই দীর্ঘ দুই যুগ পর জায়গা বদল করে নতুন ঠিকানা পাচ্ছে এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি। বিমানবাহিনীর দেওয়া এ যুদ্ধবিমানটি গত টানা ২৫ বছর মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের ঐতিহ্য হয়ে ছিল।
নতুন সড়কটি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে। দুই সড়কের সংযোগস্থলে থেকে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে ‘বিমানবন্দরের’ দিকে। এটি হবে নতুন সড়কের মূল আকর্ষণ।
এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সকালে যুদ্ধবিমানটি সিঅ্যান্ডবি মোড়ের নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে নামানোর কাজ শুরু হয়।
স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার কাজী শাহজাহান জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি কেনা হয়েছিল। বিমানটি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছে। পরে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন একটি অব্যবহৃত বিমান সিঅ্যান্ডবি মোড়ে স্থাপনের আবেদন জানায়।
অনুমোদনে পর ১৯৯৪ সালে রাজশাহী সিঅ্যান্ডবি মোড়ে কংক্রিটের তৈরি স্ট্যান্ডের ওপর এ বিমানটি স্থাপন করে সিটি করপোরেশন।
যুদ্ধবিমানটি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এ মডেলের বিমানের ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরেই থাকে। তবে এটিতে ইঞ্জিন নেই। কিন্তু এখনও দুই পাখার সঙ্গে ড্রপ ট্যাংক আছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিমানটি মডেল হিসেবে রূপ দেওয়া হলেও এর পাইলটের বসার স্থানটি ঠিক রাখা হয়। যদিও স্থানান্তরের কারণে বিমানটির পাখা এবং ড্রপ ট্যাংকগুলো খুলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বর্তমানে রং করে আবারও তা যথাস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>>>পলি জমেছে এফ-৬ যুদ্ধবিমানে!
বাংলাদেশ সময়: ২৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
এসএস/এএটি