ঢাকা, শুক্রবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে ঠিকাদার নিজেই করেছেন মামলা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে ঠিকাদার নিজেই করেছেন মামলা

খুলনা: খুলনায় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর ছোড়া গুলিটি ছিল পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি পিস্তলের। চাঁদাবাজদের উদ্দেশে করা ঠিকাদারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লামিয়ার পায়ে।

 

শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হলেও শনিবার (২৯ আগস্ট) বিকেল ৪টা পর্যন্ত লামিয়ার বাম পায়ের উরুতে তা বিদ্ধ হয়ে আটকে রয়েছে। ২৯ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো অস্ত্রোপাচার করা যায়নি স্কুলছাত্র লামিয়ার। লামিয়া খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

খুলনার মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের একটি গলির ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়ি চাঁদাবাজরা এসেছিল দাবি করা অর্থ নিতে। এ সময় ঠিকাদারের সঙ্গে বাক-বিতাণ্ডার একপর্যায়ে চাঁদাবাজদের উদ্দেশে নিজের বৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ইউসুফ। চাঁদাবাজদের উদ্দেশে করা ঠিকাদারের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বিদ্ধ হয় লামিয়ার পায়ে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

লামিয়া মহানগরীর আরাফাত জামে মসজিদ এলাকার জামাল হোসেনের মেয়ে। সে ইকবালনগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

এদিকে ঠিকাদার ইউসুফ আলী দাবি করেছেন, তার ছোড়া গুলিতে নয় তার কাছে চাঁদা চাইতে আসা চার দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছে লামিয়া। এ ঘটনায় নিজের প্রাণ নাশের চেষ্টার অভিযোগ এনে খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।  

পুলিশ বলছে, ঠিকাদারের ছোড়া গুলিই স্কুলছাত্রীর বাম পায়ে বিদ্ধ হয়েছে। একই কথা বলছেন লামিয়ার স্বজনরাও।

হাসপাতালের বেডে লামিয়ার পাশে মাসহ পরিবারের সদস্যরা শান্তনা দিয়ে ব্যথার কষ্ট ভোলানোর চেষ্টা করছেন। চিকিৎসকরা সকালে কয়েকবার লামিয়াকে দেখেও গেছেন।

লামিয়ার প্রতিবেশি মামা তরিকুল ইসলাম জানান, লামিয়ার আগে অস্ত্রোপাচারকে গুরুত্ব দিলেও মামলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তার পরিবার। ঠিকাদার ইউসুফ আলী লামিয়াকে হাসপাতালে দেখতে এসেছেন এবং চিকিৎসায় যত খরচ হবে তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

লামিয়ার নানা হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লামিয়ার এক বছর বয়সে তার বাবা তাদের ফেলে রেখে চলে যান। এরপর থেকে লামিয়ার মা আমার সংসারে থেকে অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন। অসহায় মেয়েটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আজ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। জানি না কখন পা থেকে গুলি বের করা হবে।

খুমেক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মিল্টন মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, লামিয়ার বাম পায়ের উরুর হারে গুলিটি আটকে আছে। সেখানে একটা ফ্যাকচারও হয়েছে। এ কারণে অস্ত্রোপাচার করা যাচ্ছে না। বিষয়টি অর্থোপেডিক্স বিভাগকে জানানো হয়েছে। সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগ যৌথ মেডিক্যাল টিম গঠন করে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেবে।

খুমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, লামিয়ার যেখানে গুলি লেগেছে সে জায়গাটি অনেক সেনসেটিভ। অনেক রক্ত নালী রয়েছে সেখানে। যার জন্য থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান ও আল্ট্রা সোনোগ্রাম করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে অপারেশন করা যাবে কি না।

এদিকে যার গুলিতে লামিয়া গুলিবিদ্ধ সেই আলোচিত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, তৎকালীণ প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর সুপারিশে ১৯৯৯ সালে তিনি পিস্তলের লাইসেন্স পান। ২০০০ সালের শেষের দিকে পিস্তল ক্রয় করেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঠিকাদারি একটি কাজ নিয়ে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন।  

ঠিকাদারের দাবি, তার কাছে আসা চার যুবক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিও করেছিলো। তাদের গুলি লামিয়ার বাম পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।

এলাকাবাসী বলছেন, লামিয়াকে গুলি বর্ষণের ঘটনাটি রহস্যে ঘেরা। ইউসুফ আলীর কাছে কারা ঠিকাদারি কাজটি দাবি করেছিল, তিনি কেন- সেটা এখনো প্রকাশ করছেন না। বাড়িতে নিয়ে চাঁদাবাজদের বসতে দিয়েছেন অথচ তিনি চেনেন না। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে তিনি মামলা করলেন এটা অবিশ্বাস্য।  

এলাকাবাসীর কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ঠিকাদারের পরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তার বাড়িতে এসেছিলেন। যার কারণে তিনি পরিচয় গোপন করছেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সাউথ) মো. শাকিলুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ইউসুফ আলীর পিস্তলটি লাইসেন্স করা। তবে অন্যের ছোড়া গুলিতে নয় তারই ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছে স্কুলছাত্রী লামিয়া।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী চারজন অজ্ঞাতনামা চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। এ ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তল, অব্যবহৃত ১০ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে মহানগরীর দোলখোলা এলাকায় সন্ত্রাসীরা খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ও খুলনা সিটির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা চিত্তরঞ্জন কুন্ডের স্ত্রী শ্রিপা কুন্ডের বুকে লাগে। এতে তিনি মারা যান। দোলখোলার পাশের এলাকায় মিস্ত্রি পাড়ায় লামিয়ার পায়েও লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়া গুলি লাগে।

** ২৪ ঘণ্টায়ও হয়নি গুলিবিদ্ধ লামিয়ার অস্ত্রোপচার
** খুলনায় স্কুলছাত্রী গুলিবিদ্ধ

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।