ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রিফাত হত্যা: পুলিশের চাকরিটা ফিরে পেতে চায় সাগরের পরিবার

মুশফিক সৌরভ ও শফিকুল ইসলাম খোকন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২০
রিফাত হত্যা: পুলিশের চাকরিটা ফিরে পেতে চায় সাগরের পরিবার মো. সাগর/ ফাইল ছবি

বরগুনা: আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া, আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় খালাস পেয়েছেন মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বী, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পিপি ভূবন চন্দ্র হালদার এবং মোস্তাফিজুর রহমান বাবু জানান, বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান ২০০ পৃষ্ঠার এ রায় ঘোষণা করেন।

খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে মো. সাগর পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগদানের অপেক্ষায় ছিলেন, যিনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পুলিশ লাইন্সে গিয়ে ৩০ জুন রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন।

২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ/ ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা। তবে ওই মামলায় খালাসপ্রাপ্ত মুসা ছাড়া আর কারো নাম সরাসরি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

আইনজী‌বি অ্যাডভো‌কেট শাহজাহান বলেন, খালাসপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে বিষয়গুলো প্রসিকিউশন থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। পাশাপাশি ডিফেন্স আইনজী‌বি হিসেবে আমরাও তাদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের খালাশ দিয়েছে।

খালাসপ্রাপ্ত চারজনের মধ্যে সাগরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হলে দীর্ঘ ১৪ মাস ২৫ দিনের মাথার মুক্তি পেয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাগরের বড় ভাই সাইফুর রহমান শাওন বলেন, বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাগরকে কারাগার থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।

তিনি বলেন, ‘সবাই রিফাত হত্যার বিচার চেয়েছে, এতে যদি আমার ভাইয়ের একটুও অপরাধ থাকতো তাহলে তার সাজা হলে আমাদের কিছু বলার থাকতো না। কিন্তু সে নির্দোষ, তাই আদালতও বিষয়টি জানতে পেরে তাকে খালাস দিয়েছেন। এ রায়ে শুধু আমরাই সন্তুষ্ট এমন নয়, নিহত রিফাতের পরিবারও সন্তুষ্ট। আর আমরা ন্যায় বিচারও পেয়েছি। ’

তিনি বলেন, ‘রিফাত নিহত হওয়ার পর সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আমরা জানি সাগর নির্দোষ, আর আল্লাহ সহায় থাকলে সে ছাড়াও পাবে। তাই আমরা সাগরের গ্রেফতার নিয়ে কোনো ধরনের সমালোচনায় যাইনি। ’

‘সাগর আমার সঙ্গে ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করতো। রিফাত নিহত হওয়ার কয়েকদিন আগে অর্থাৎ ২১ জুন বাবা আব্দুল লতিফ মাস্টার সাগরকে ঢাকা থেকে পুলিশে চাকরি নেওয়ার জন্য বরগুনায় নিয়ে আসেন। ওই সময় বরগুনা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ঘুষ ব্যতীত মাত্র একশ’ টাকায় কনস্টেবল পদে নিয়োগের একটি প্রচারণা চলছিল। যা সমগ্র বরগুনায় মাইকের মাধ্যমেই প্রচার হয়। এর মাধ্যমে বাবা বিষয়টি জানতে পেরে সাগরকে পুলিশে চাকরি নিতে বলেন। আর আমরা খুবই গরিব, ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই বাবা এ চাকরিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। ’

তিনি বলেন, ‘সাগর বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীন্ন হয়েছে, আর এইচএসসিতেও ৪.৭৫ পেয়েছে। সাগর মেধাবী হওয়ায় বাবা ওকে পুলিশে চাকরি নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে আর সেখান থেকেই ও পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেয়। ’

সাগরের বড় ভাই জানান, ‘১০ হাজার জনের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪১ জনের মধ্যে ১৮তম হয় সাগর। আর এ কার্যক্রম শুরু হয় ২৫ জুন থেকে। এরপর থেকে সাগরের পুলিশ লাইন্সেই সময় বেশি কাটতো। ২৬ তারিখ ঘটনার সময় সাগর বাবা-মায়ের সঙ্গে পুলিশ লাইন্সে রেজাল্ট জানতে যায়। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসা কলেজ রোডের পেছনে, ফলে কলেজ রোড ব্যবহার করাটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক। রিফাতকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার সময় সাগর ওখানে ছিল না। যদি ১০টায় ঘটনা হয়, আর ১০টা ২৩ মিনিটে সেখানে পুলিশ যায় এবং সেখানে ভিড় হয়। ১০টা ৪৮ মিনিটে সাগর ঘটনাস্থল থেকে যায়, যেটা স্বাভাবিক। ’

তিনি বলেন, ‘২৭ জুন আমতলীতে ডিআইজির অনুষ্ঠানেও সাগর যায় এবং ৩০ তারিখ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পুলিশ লাইন্সেও যায় সে। এরপর তাকে ডেকে নেওয়া হয় এবং ঘণ্টাখানেক পর গ্রেফতার দেখানো হয়। সাগরকে আলাদাভাবে ডাকার পরপরই সে আমাকে মেসেজ দিয়েছে, যা আব্বা-আম্মাকে আমি জানাই। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় কারো দোষ দেই না, ভাগ্যে ছিল। তবে সরকারসহ সবার কাছে দাবি রাখছি যেন সাগরের চাকরিটা ফিরে পায়। ’

সাগরের ভাই বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, যে কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে তার চাকরি থাকবে না, আর কেউ অপরাধী না হলে চাকরিও পাবে। তাই আমাদের পরিবারের চাওয়া ও যেন চাকুরিটা ফিরে পায়। শিক্ষকতা করে বাবা সংসার চালিয়েছেন, আমরা তেমন একটা স্বচ্ছল নই যে ঘুষ দিয়ে চাকুরি পাবো। ঘুষবিহীন চাকরি দেওয়ার কথা শুনেই বাবা-মা পুলিশে চাকরি নেওয়ার কথা বলেছিল সাগরকে। ’

এদিকে সাগরের আইনজীবী জুনায়েদ হোসেন জুয়েল বলেন, ‘চাকরিটা ফিরে পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে। ও যে খালাস পেয়েছে সেই আদেশের কাগজপত্র আদালত থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওঠানো হবে। এরপর এটি নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিট করার চিন্তাভাবনাও করছি, যাতে ও চাকুরিটা ফিরে পায়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২০
এমএস/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।