ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষায় সাংবাদিক ঐক্যের প্রয়োজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষায় সাংবাদিক ঐক্যের প্রয়োজন

ঢাকা: আমাদের নানা মত থাকতে পারে, নানা পথ হতে পারে তবে জাতীয় প্রেসক্লাবকে আমাদের গণতান্ত্রিক অবস্থায় রাখতে হবে। এখানে যেমন গণতান্ত্রিক স্রোতধারা বয়ে ছিল জাতির নানা ক্লান্তিকালে, আজও আমাদের সে ধারা রক্ষা করতে হবে।

এখান থেকে যেমন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রামের দিক-নির্দেশনা এসেছে আমাদের সেটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের নানা মত ভুলে পেশাগত দায়িত্বের জায়গাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তবেই সংকট, সমস্যা নিরসনে সমাধান আসবে।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের ৬৬ বছর ও বাংলাদেশের সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন দেশ বরেণ্য সাংবাদিকরা।

সেমিনারে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এত ধনী, টাকার মালিক যা ইউরোপ-আমেরিকাতেও নেই। আবার আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এত অসহায়, অর্থ সংকটে থাকেন যা আফ্রিকার কোনো দেশে নেই। এসবের কারণ এখানে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে, নেতৃত্বের লোভ রয়েছে। আমরা কেন এত দলে বিভক্ত হবো, আমাদের বিভক্তের কারণে আমরা মালিকপক্ষকে তেমন চাপ দিতে পারি না। আবার সরকারও চায় গণমাধ্যম শক্তিশালী না হোক, সেটা যে সরকারই হোক না কেনো। আমাদের ঐক্য প্রয়োজন যার মাধ্যমে আমরা সবাই সবাইকে সহযোগিতা করতে পারি।

সেমিনারে সিনিয়র সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আগে আমরা দেখতাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নড়বড়ে তবে শিক্ষা ছিল শক্তিশালী, এখন তার বিপরিত ঘটছে। একই অবস্থা সাংবাদিকতার, গণমাধ্যমের প্রসার ঘটলেও আগের সাংবাদিকতা বা নৈতিকতা নেই। আমাদের প্রিন্ট মিডিয়ার একটা ওয়েজবোর্ড থাকলেও ইলেকট্রিক মিডিয়া কোম্পানির অধীনে। সেখানে আজ কারো চাকরি চলে গেলে কোম্পানি আইনে তার শূন্য হাতে ফিরতে হয়, এটা আমাদের দেখা উচিত। এক সময় গণতন্ত্রের ধারা এখান থেকেই প্রবাহিত হতো নানা মত থাকা সত্ত্বেও। আমাদের সেটা ধরে রাখতে হবে, আস্থার জায়গাটা আরও শক্ত করতে হবে। এ সময় তিনি কমিটিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের ইতিহাস লেখারও প্রস্তাব করেন।


সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, এখনও জাতীয় প্রেসক্লাব মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক। এজন্যই এখানে  মানুষ সভা সেমিনার, মানববন্ধন করতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন। আমাদের এ ক্লাবের যে ঐতিহ্য আছে সেটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রেসক্লাবের নতুন বিল্ডিংয়ের জন্য কাজ শুরু করেছি মাত্র। এরই মধ্যে জমির দলিল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়, এতে আটকে যায় কাজ। তবে আশার কথা হলো ১৫ দিন আগে সব কাগজ হাতে পেয়েছি আমরা, এখন আর কোনো সমস্যা হবে না। আশা করি কম সময়ে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স হবে।

সেমিনারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান ফারুক বলেন, আজ মিডিয়ার প্রসার ঘটেছে অনেক বেশি। অনেক বেশি অনলাইনসহ অন্যান্য গণমাধ্যম দেখি কিন্তু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ সংবাদকর্মীকে আমরা কি নার্সিংয়ের মধ্যে আনতে পারছি, এটা দেখার বিষয়। আমরা নিজেরা সাংবাদিক হয়ে গেলাম আর পূর্বসূরীদের জন্য কিছু করতে পারবো না এটা কি করে হয়। আমাদের সবাইকে নিয়ে ভাবতে হবে।

সেমিনারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী একটা স্মরণ সভার মাধ্যমে শুরু করেছি যেটা অত্যন্ত কষ্টের। করোনার কারণে আমরা আমাদের ১৮ জনকে হারিয়েছি। এখানে আমাদের মিলন ঘটতো, সবাই সবাইকে সম্মানের চোখে দেখতো। এখনও আস্থার জায়গাতে কোনো ভাঁজ পড়েনি এখানে, নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই ক্লাবে। তবে আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিষয় নিয়ে কোনো দিন আপস করিনি আর করতেও চাই না।

আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবন্ধ পাঠ করেন সিনিয়র সাংবাদিক হারুণ হাবিব ও আমানুল্লাহ। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত্বের পরিচালনায় আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) মো. শফিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি এহসানুল কমির হেলাল ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সহ-সভাপতি আজিজুল ইসলাম ভুইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক শাহেদ চৌধুরী, মহিউদ্দিন আলম, রাশেদ চৌধুরী, পবিত্র কুণ্ড, কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিক নেতারা। সেমিনার শেষে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
ইএআর/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।