ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রায়হানের বাড়িতে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
রায়হানের বাড়িতে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত দল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্ত কমিটির প্রধান এআইজি মুহাম্মদ আয়ুব

সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া কীভাবে পালিয়ে গেলেন? তার পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে কেউ জড়িত আছেন কিনা তা খতিয়ে দেখবে ঢাকা থেকে আসা তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দিনগত রাত ৮টার দিকে নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ায় নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের শান্ত্বনা দেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি-ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভাগ) মুহাম্মদ আয়ুবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা রায়হানের বাড়িতে যান। এ সময় তারা রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে তদন্ত কমিটির প্রধান এআইজি মুহাম্মদ আয়ুব সাংবাদিকদের বলেন, এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আর কেউ সংশ্লিষ্ট আছেন কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করার জন্যই তাদের সিলেট আসা।

এ তদন্তের অংশ হিসেবে তারা রায়হানের বাড়িতে এসে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন।  

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রায়হানের বাড়িতে যান সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি নিহতের পরিবারের খোঁজ-খবর নেন এবং রায়হান হত্যাকারীদের খোঁজ বের করে শাস্তির বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানান।  

গত রোববার (১১ অক্টোবর) ভোররাতে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রায়হানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার পর রোববার থেকে আকবর পলাতক রয়েছেন।

মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বপরি মরদেহ কবর থেকে তোলে পুনঃময়নাতদন্ত করে।

রায়হান হত্যার ঘটনায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন। প্রতিদিন সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

এদিকে সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের (৩০) শরীরে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। আর অতিরিক্ত আঘাতের কারণে শরীরের ভেতর রগ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণে রায়হানের মৃত্যু হয়।

আঘাতে শরীরের মাংস থেতলে যায়। রগ ফেটে গিয়ে আন্তদেহে রক্তক্ষরণ (ইন্টারনাল ব্লিডিং) হয়। আর অতিরিক্ত আঘাতে মূর্ছা যান রায়হান। আঘাত করার সময় রায়হানের পাকস্থলি (স্টমাক) খালি ছিল। স্টমাকে ছিল কেবল লিকুইড এসিডিটি। রোববার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।  

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রিপোর্টটি পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া রায়হান হত্যার ঘটনায় গত সোমবার (১৯ অক্টোবর) তিন পুলিশ সদস্য ১৬৪ ধারায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ওইদিন তাদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুল করিন। এ ঘটনায় পুলিশ লাইনে বরখাস্ত থাকা কনস্টেবল টিটুকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।    

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এনইউ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।