ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যান্টিভেনম নেই, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে সাপে কাটা রোগীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০
অ্যান্টিভেনম নেই, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে সাপে কাটা রোগীর .

রাজশাহী: রাজশাহীতে সাপের কামড়ের শিকার বেশি হন গ্রামের মানুষ। গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই সাপের কামড়ে মানুষের জীবন সঙ্কটাপন্ন হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

প্রতিবছর রাজশাহী জেলায় অন্তত ৫০০ জন মানুষ সাপের কামড়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন।  

অথচ রাজশাহীর অধিকাংশ উপজেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যাপ্ত পরিমাণ সাপের বিষক্ষয়ের ওষুধ (অ্যান্টিভেনম) নেই। ফলে বিষাক্ত সাপের কামড়ে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতালে সাপের বিষক্ষয়ের পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্ষা মৌসুমে সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে। আষাঢ় থেকে আশ্বিন এ দুই মাসে অন্য সময়ের চেয়ে উপজেলাগুলোতে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন না থাকায় বিষাক্ত সাপে কাটা অনেক রোগী মারা গেছে। গ্রামে সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটলে সেখানে চিকিৎসার সুযোগ তুলনামূলকভাবে সীমিত। যে কারণে সাপের কামড়জনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামে অনেক বেশি। আর কুসংস্কারের কারণে সাপের কামড়ের শিকার অনেকে প্রথমে চিকিৎসকের কাছে যান না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে সাপে কাটা ব্যক্তির জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়।  

রাজশাহী অঞ্চলে মোট সাপের প্রজাতি রয়েছে ৭২টি। এরমধ্যে বিষাক্ত সাপ রয়েছে ছয় প্রজাতির। এগুলো হলো- চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার, খোয়া গোখরা, পদ্ম গোখরা, কেউটে, সিন্ধু কালার, ব্ল্যাক ক্লেট। এদের মধ্যে রাসেল ভাইপার ভারতীয় সাপ। আর বাকি পাঁচটি দেশীয় সাপ।  

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য মতে, ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৬৩ জন রোগী রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০১৯ সালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩৮ জন এবং মারা গেছেন ৪০ জন। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২২৫ জন এবং মারা গেছেন ১২ জন।  

রাজশাহীর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাপে কাটা রোগীদের বেশির ভাগ রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাগমারা, তানোর, গোদাগাড়ীর। জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে মাত্র দু’টি উপজেলায় রয়েছে অ্যান্টিভেনম। বাকি সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম নেই।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিষাক্ত সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় সত্য সরকার নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের। তাকে প্রথমে গ্রামের ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রামেক হাসপাতালে আনা হয়।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় সাপের কামড়ে হোসেন আলী (৪০) ও আশা নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। তাদেরও প্রথম অবস্থায় গ্রামের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।  

চিকিৎসকরা বলছেন, সময় নষ্ট ও গ্রামের ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে সেবা নেওয়ার ফলে বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। নির্বিষ সাপে আক্রান্তদের উপজেলাতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে সিংহভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম না থাকায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসতে হচ্ছে। দেরি করে আসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।  

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ মণি ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে সাপেকাটা রোগীর ৯০ শতাংশই নির্বিষ আর বিষাক্ত ১০ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ রোগী মারা যাচ্ছে সাপ দংশন করার পর গ্রামের ওঝা বা গ্রামের চিকিৎসকে দেখানোর জন্য। তারা সময় নষ্ট করে হাসপাতালে আসেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় বাঁচানো সম্ভব হয় না।  

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, বর্ষা মৌসুমেই সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সবচেয়ে বেশি রোগী আসে নওগাঁ ও নাটোর জেলা থেকে। এরমধ্যে রাসেল ভাইপার সাপে কাটা রোগী আছে। বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীদেরও বাঁচানো সম্ভব- যদি সময়মতো তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।  

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, সাপে কাটা রোগীদের বিষয়ে আমরা মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকদের ট্রেনিং করাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশনের জন্য ঢাকাতে বলা হয়েছে। সময় মতো সেগুলো সরবরাহ করা হবে। এখন বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় অ্যান্টিভেনম রয়েছে। তবে এতো দেরি করে কেন অ্যান্টিভেনম আনা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২০ 
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।