ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত চলছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
রাজশাহীতে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত চলছে

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রফিকুল ইসলাম (৩২) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পুলিশের ৫ সদস্যের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি আলাদা করে তদন্ত করে দেখছে।

খুনের অভিযোগ ওঠা ৫ জন হলেন, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, আবদুল মান্নান ও রেজাউল ইসলাম এবং কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও শফিকুল ইসলাম। গত মার্চে নিহত রফিকুল খুনের সময় তারা প্রত্যেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন।

নিহত রফিকুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পোলাডাঙ্গা গাইনাপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  

জানা যায়, চলতি বছরের ২২ মার্চ সকালে গোদাগাড়ীর মাটিকাটা দেওয়ানপাড়া এলাকার পদ্মার চর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে তখন প্রচার চালানো হয়। এ ঘটনায় সেদিনই থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।

পরে ১৭ জুন নিহতের স্ত্রী রুমিসা খাতুন বাদী হয়ে শরিফুল ইসলাম (৩২) ও জামাল উদ্দিন (৩২) নামে দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে শরিফুল নিহত রফিকুলের সঙ্গে সীমান্ত থেকে হেরোইন নিয়ে এসেছিলেন। যে রাতে রফিকুল খুন হন পুলিশ তাকে সে রাতেই হেরোইনসহ গ্রেপ্তার দেখায়। আর ওই মামলায় রফিকুলকে পলাতক আসামি দেখানো হয়েছিল। পরে রফিকুল হত্যা মামলাতেও শরিফুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

হত্যা মামলা দায়েরের এক মাসের মধ্যেই পিবিআই স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তভার গ্রহণ করে। বর্তমানে রাজশাহী পিবিআইয়ের এসআই জামাল উদ্দিন মামলাটির তদন্ত করছেন। গত ২৯ অক্টোবর তিনি এ মামলায় ইসাহাক আলী ইসা (২৮), ফরিদুল ইসলাম (২৫) এবং মাহাবুর আলী (৩১) নামে গোদাগাড়ীর তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেন। পরদিন ইসা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

ইসা তার জবানবন্দীতে বলেছেন, ঘটনার দিন ৫০০ গ্রামের একটি হেরোইনের চালান নিয়ে আসছিলেন রফিকুল ও শরিফুল। কিন্তু তিনি দুই লাখ টাকার বিনিময়ে চালানটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করেন। পরে রফিকুল ও জামাল যখন তার হেরোইন নিয়ে আসছিলেন তখন ইসা এসআই মিজানুর, আবদুল মান্নান, রেজাউল ইসলাম এবং কনস্টেবল শফিকুল ও শাহাদাতকে নিয়ে মাটিকাটা দেওয়ানপাড়া সিঁড়িঘাট এলাকায় যান। পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে রফিকুলের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মারধরের একপর্যায়ে রফিকুল মারা যান। পরে পুলিশ চরে তার লাশ ফেলে আসে। আর রফিকুলের সঙ্গে থাকা জামালকে ধরে এনে ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলা দেয়া হয়। অবশিষ্ট ৪০০ গ্রাম হেরোইন পুলিশ আত্মসাত করে।

তার এমন স্বীকারোক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির প্রধান মতিউর রহমান সিদ্দিকী জানান, আদালতে কী জবানবন্দী হয়েছে তারা সেটি জানেন না। ওই বিষয়টি মামলার তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে দেখবে। তবে গণমাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি উঠে এসেছে তাই তারা তদন্ত করছেন। এটা পুলিশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই জামাল উদ্দিন জানান, আসামিদের আদালতে তোলার আগে যেসব তথ্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল তিনি সেসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। আর জবানবন্দীর কাগজপত্র তোলার জন্য সোমবার (৯ নভেম্বর) আদালতে লোক পাঠিয়েছেন। আসামির মৌখিক তথ্য এবং জবানবন্দির বিষয়গুলো মিলিয়ে তিনি তদন্ত এগিয়ে নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৯ ঘন্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
এসএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।