ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২০
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউএনওর অভিযোগ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তা।  

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে গণস্বাক্ষরিত অভিযোগটি জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করে বিভিন্ন দফতরে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

 

অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লংঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দফতরের কর্মকর্তাকে অশ্রব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, ভিজিডি, মাতৃত্ব ভাতা, কৃষি প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন চেয়ারম্যান। বিধি বহির্ভূতভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেওয়ায় এবং প্রাক্কালন কাজ শেষ না হতেই বিল পরিশোধ না করায় সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে রুমে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেন চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, তার কথামত কাজ না করায় একজন নারী কর্মকর্তাকে বহিরাগতদের দিয়ে মানহানির ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সব দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা তুলে ধরা হয় অভিযোগে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।  

চরম উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে কল করে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ইউএনওসহ উপজেলার সব দফতরের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।  

একই দিন রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে এ সংক্রান্ত গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪।  

এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।  

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে বিশ্বাস রাখি।  

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, জনস্বার্থে গত অর্থ বছরের সব দফরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাওয়ায় অফিসাররা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইউএনও নিজেই বিধি বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারের নামে নিয়ে এডিপি ও আশ্রয়ন প্রকল্প ২ এর কাজ করছেন। স্থানীয় ভাটা মালিকদের চাপ দিয়ে ইট নিয়ে এসে উপজেলা পরিষদে রেখেছেন। তদারকি কর্মকর্তা হয়ে নিজে কাজ করার বিষয়টির প্রতিবাদ করায় ইউএনও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তবে এসব বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ সচিবকে (ডিডিএলজি) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।