ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চিতই-ভাপায় শীতের সন্ধ্যা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
চিতই-ভাপায় শীতের সন্ধ্যা

মাদারীপুর: প্রকৃতিতে এখন শীতের ছোঁয়া। গেলো কয়েকদিন ধরেই ভোরে আর সন্ধ্যায় অনুভূত হচ্ছে শীত।

সন্ধ্যার পর গায়ে জড়াতে হচ্ছে হালকা গরম কাপড়ও। এ শীতকে উপভোগ্য করে দিতে ভাপা আর চিতই পিঠার জুড়ি মেলা ভার। মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যাটা জমে উঠছে ধোঁয়া ওঠা ভাপা আর চিতইয়ে।

বাদাম, ধনিয়া পাতা, মরিচ-রসুন, সরিষার বাহারি রকমের ভর্তার সমন্বয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত বিক্রি হয় চিতই পিঠা। এছাড়াও নারিকেল ও গুড় দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠাও প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার পর থেকেই ভিড় লেগে থাকে এসব দোকানে। যেন শীতের সন্ধ্যা শুরু হয় চিতই-ভাপা পিঠার মধ্য দিয়ে!

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শীতের শুরুতেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে নারীরা রাস্তার পাশে, স্থানীয় বাজারসহ জনসমাগম স্থানে ছোট্ট চুলায় করে চিতই ও ভাপা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করছে। এ সব দোকান ঘিরে দাঁড়িয়ে-বসে পিঠা খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গরম পিঠা পেতে লাইনও ধরছেন অনেকে।

সন্ধ্যার পর মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের পাড়ে অবকাশ কাটাতে ভিড় জমে সাধারণ মানুষের। আর সে সময়েই পিঠা খাওয়ার উৎসব শুরু হয়। বাহারি রকমের ভর্তা দিয়ে গরম গরম চিতই পিঠা খেতে ভিড় লেগে যায় ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে।  

দেখা যায়, চাহিদা মেটাতে দোকানি বেশ কয়েকটি চুলায় একত্রে পিঠা বানাচ্ছেন। লেকপাড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানের পিঠা তৈরির দোকানগুলো মূলত নারীরা পরিচালনা করে থাকেন। জানতে চাইলে পিঠা তৈরির ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তারা জানান, ‘আসলে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা নারীরাই ভালো ভাবে তৈরি করতে পারে। শীতের সময়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য তারা রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকান দিয়ে বসেন। চিতই পিঠার সঙ্গে শুঁটকি ভর্তা, বাদাম ভর্তা, কাঁচা মরিচ-রসুন ভর্তা, ধনিয়া পাতার ভর্তা বেশি চলে। এগুলোর সঙ্গে সরিষা ভর্তা দেওয়া হয়। চিতই পিঠার পাশাপাশি ভাপা পিঠাও বিক্রি হয়। তবে চিতই পিঠার চাহিদাই বেশি। ’

সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, ‘শীতের সময়ই এসব পিঠা খাওয়ার চাহিদা বেশি থাকে। বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে হালকা নাস্তা হিসেবে বেশ ভালো এই চিতই পিঠা। তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে চিতই পিঠা স্বাস্থ্য সম্মত। স্বল্প খরচে পেটও ভরে। বিশেষ করে শীত শীত ভাব থাকলে চিতই-ভাপা পিঠা অন্য রকম একটা বৈচিত্র আনে। ’

দোকানিরা জানান, ‘পাঁচ টাকা করে একেকটি পিঠা বিক্রি করা হয়। তাতে করে ভালো আয় হয় শীত মৌসুমে। ’

রাস্তার পাশে বসে এক বা একাধিক চুলায় সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত পিঠা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে সংগ্রামী জীবন-যাপন করছে নারীরা। এদের মধ্যে সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় নিজেই সংসারের হাল ধরেছেন এমন নারীদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় পুরুষের পাশাপাশি পেশা বেছে নিয়েছেন অনেকেই। শীত মৌসুম এলেই পিঠা বিক্রি এবং অন্য সময়ে অন্য কাজ করে জীবন ধারণ করেন তারা। এছাড়াও মৌসুমি পিঠা বিক্রেতাদের সংখ্যাও কম নয়। বাড়তি উপার্জনের আশায় শীতের সন্ধ্যায় বাজার বা রাস্তার পাশে বসে পিঠা বিক্রি করেন অনেকেই। তাদের এই চিতই-ভাপা পিঠাতেই যেন সন্ধ্যায় শীতের মোহনীয় আবেশের সূচনা!

বাংলাদেশ সময়: ০২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
ডিএন/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।