ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতি আবার থমকে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতি আবার থমকে যাওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

ঢাকা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় অর্থনীতির চাকা আবার থেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য নীতি নির্ধারণে আরো সতর্ক হওয়াসহ নতুন করে প্রণোদনা ঘোষণারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুতি আছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মোকাবেলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ’ শীর্ষক সিরিজ মতবিনিময় সভার প্রথমদিনের সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

সংলাপে ‘কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতির সামগ্রিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

সংলাপে বক্তারা বলেন, এখন কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য প্যাকেজ বাস্তবায়নে আরও নজর দিতে হবে। আর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঘোষিত প্যাকেজ বাস্তবায়নে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, দেশে কোভিডের প্রভাব পড়ার শুরুতেই সরকার বিভিন্ন নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতি এখন পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। এর বিপরীতে আমদানি ব্যয় কমেছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ, সার্বিক রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ পর্যন্ত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫৫ শতাংশ অর্থ ছাড় করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ অর্থ এখনো ছাড় করা হয়নি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে সরকার। এ সময়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা ছিল। এখন করোনা পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা নিয়ে ভাবতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময়ই কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়টি আমাদের ভাবনার মধ্যে ছিল। এসব ঋণে সার্ভিস চার্জ বেশি ও ঋণ আদায়ে অনিশ্চতার কারণে ব্যাংকগুলো এতে তেমন আগ্রহ দেখায় না। ক্ষুদ্র শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার আওতায় আনতে প্রয়োজনে পৃথক প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।

এছাড়া বাংলাদেশের জনগণের জন্য কোভিড প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার তৎপর রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দু’টি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রথম শ্রমিকদের সহায়তা করা, বিশেষ করে পোশাকখাতের শ্রমিকসহ দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিকদের সব ধরনের সহায়তার আওতায় আনতে হবে। এতে তাদের কর্মসংস্থান টিকে থাকবে। দ্বিতীয় হচ্ছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন তিনি।

বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, আরও একটি ধাক্কা নিয়ে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব এগিয়ে আসছে। এ নিয়ে শঙ্কিত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে ইউএসতে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ, জার্মানে ১০ শতাংশ, জাপানে ২৮ শতাংশ, ইতালিতে ৩০ শতাংশ, কানাডায় ৩০ শতাংশ, স্পেনে ৬ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। এর আগে পোশাকের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগামী ৫ বছরের জন্য স্বল্প সুদে প্যাকেজের আওতায় ঋণ দরকার।

বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাত ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় কর্মরত বয়স্ক ও স্বল্প শিক্ষিত শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছে। এদেরকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা দরকার। পাশাপাশি নারী উদ্যেক্তাদের জন্য প্রণোনা ঋণের পরিমাণ বাড়ানো এবং  দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেয়া উচিত।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২৯ শতাংশ কারখানা এখনো বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। প্রণোদনা ঋণ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও জোরালো মনিটরিং প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২০
জিসিজি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।