ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ধর্ষণ ও নারী-শিশু নিপীড়ন প্রতিরোধসহ ১১ দাবি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
ধর্ষণ ও নারী-শিশু নিপীড়ন প্রতিরোধসহ ১১ দাবি 

ঢাকা: সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী-শিশু নিপীড়ন ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার করার আহ্বানসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল নারী সংগঠনগুলো।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশ আয়োজন করে প্রগতিশীল নারী সংগঠনগুলো।

সমাবেশের আগে একটি মিছিল শাহাবাগ থেকে শুরু হয়ে বাটা মোড়, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, কাঁটাবন হয়ে শাহাবাগে এসে শেষ হয়।

সভাপতির বক্তব্যে সিপিবি নারী সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, সারাদেশে ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ দেশের কোনো একটি জায়গা নেই যেখানে নারীরা নির্যাতনের শিকার হন না। এসব ধর্ষণ, নারী নিপীড়নের ভয়াবহতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানিদের নারী নির্যাতনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।  

‘নারী, শিশু ধর্ষণ নির্যাতনের একশটি মামলার ৯৭টিরই  বিচার হয় না। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও অর্থের দাপটে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে ধর্ষকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ’

সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোনো মানুষ ধর্ষক হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সমাজের নানা অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণবিধির মধ্যেই সে ধর্ষক হয়ে ওঠে। ধর্ষণের অন্যতম কারণ সমাজে নারী-পুরুষের অধিকারের সীমাহীন অসমতা, সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা না দেওয়া, অধস্তন হিসেবে দেখা, বলপ্রয়োগের অপরাজনীতি, বিচারহীনতা, মৌলবাদ, প্রতিক্রিয়াশীলদের কূপমণ্ডুক দৃষ্টিভঙ্গি, নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন, মাদক,পর্নোগ্রাফি সর্বোপরি ভোগবাদী পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।  

বক্তারা ধর্ষণ, নারী-শিশু নিপীড়ন ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বিবেকবান মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সমাবেশে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবিতে মাসব্যাপী জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি সফল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

দাবিগুলো হলো: সারাদেশে অব্যাহতভাবে ধর্ষণ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, আদিবাসী নারীদের ওপর যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি,বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত, ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারাকে বিলোপ করা এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য-প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করা, অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অন্তর্ভুক্ত করা, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অসম্পূর্ণ সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, তদন্তকালীন  ভিকটিমের মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করা, ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিদ্বেষী সংবিধানবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, সাহিত্য, নাটক, সিনেমায় নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা বন্ধ, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা পালন করা, সুস্থ ধারার সংস্কৃতির চর্চায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা, সারাদেশে মাদক বন্ধে সরকারিভাবে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, পাঠ্যপুস্তকে বিদ্যমান নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দচয়ন পরিহার, গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।

লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সোমা দত্ত, নারী সংহতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তসলিমা আখতার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭,২০২০
এমএমআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।