ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৬ ডিসেম্বরের রোদ ঝলমল দিনে মুক্ত হয় ফেনী

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২০
৬ ডিসেম্বরের রোদ ঝলমল দিনে মুক্ত হয় ফেনী ফেনী শহরের জেল রোড় ও পরশুরামের বিলোনীয়ায় মুক্তিযোদ্ধ স্মৃতিসৌধ। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ৬ ডিসেম্বর ফেনী পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীর মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিল।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামে হানাদার বাহিনীর নৃশংস বর্বরতায় ক্ষত-বিক্ষত ফেনী শহরে স্বাধীনতাকামী বাঙালীরা বিজয়ের নিশান উড়িয়েছিল। স্বজন হারানোর কান্না ভুলে উল্লাস করেছিল রোধ ঝলমলে দিনে।

তৎকালীন ফেনী মহকুমা ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি অবর্ণনীয় জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। এ জেলায় হয়েছে বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমর।

ফেনী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেবের সাথে কথা বলে জানা যায় বিজয়ের গল্প। তিনি জানান, যুদ্ধের বছর এদিন সকালের ঝলমলে রোদে স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জেলার বিভিন্ন স্থানে আটটি বধ্যভূমিতে শহীদদের লাশ সনাক্ত করতে বা তাদের কবর চিহ্নিত করতে ছুটে বেড়িয়েছিল স্বজন হারারা।

ফেনী অঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত তৎকালীন ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম (পরবর্তীতে লে. কর্ণেল হিসেবে অব.) ভারতের বিলোনীয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১০ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অভিযানে বিলোনিয়া, পরশুরাম, মুন্সিরহাট, ফুলগাজী, যুদ্ধ করতে করতে এগুতে থাকে। পর্যদুস্ত হয়ে ফেনীর পাক হানাদার বাহিনীর একটি অংশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী হয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের রাস্তায় অপর অংশ শুভপুর ব্রীজের উপর দিয়ে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে যায় বলে যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর ফেনী মহকুমা কমান্ডার অধ্যাপক জয়নাল আবদীন এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দাগনভূঞা, রাজাপুর, সিন্দুরপুর হয়ে শহরের দিকে এগুতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পাক হানাদাররা ৬ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়। সে সময় অবাঙ্গালী মহকুমার প্রশাসক বেলাল এ.খান পাকবাহিনীর সঙ্গে চলে যায়।

আবদুল মোতালেব বলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ শুনেই জয় বাংলার শ্লোগান ও করতালির মধ্য দিয়ে ফেনীর রাজাঝির দিঘীর পাড়ে সার্কিট হাউজে ও ট্রাংক রোডের প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধারা ও হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ একত্রিত হতে থাকে। দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী ১০ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) বীর বিক্রম লে. কর্নেল জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সকালেই ফুলগাজীর বন্ধুয়া থেকে এসে ফেনী সার্কিট হাউজে (বর্তমান ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেষ্ট হাউজ) প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

তিনি বলেন, বীর বিক্রম লে. কর্নেল জাফর ইমামের নেতৃতে ফেনীর বিলোনিয়ার সম্মুখ সমর আর গেরিলা যুদ্ধের রণকৌশল ইতিহাসে স্থান করে নেয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মিলিটারী একাডেমিতে যা পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি ফেনীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গর্বের হলেও দুঃখ-বেদনা কম নয়।

ফেনী হানাদারমুক্ত হওয়ার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামের সাথে সড়ক ও রেল পথে হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে করে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সূর্য উদিত হওয়ার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ফেনী জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গণকবর, যুদ্ধকালীন স্মৃতিচিহ্নগুলি সংরক্ষণের অভাবে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর হতে চলেছে এখনও স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে ফেনীবাসী।

তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রতিবারের ন্যায় এবার ফেনী মুক্তদিবস ঘটা করে পালন করা হচ্ছে না। ফেনীতে সীমিত পরিসরে পালিত হবে ফেনী মুক্ত দিবস। জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান।

এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফেনী মুক্ত দিবসে প্রতিবারের মতো এবার মুক্তিযুদ্ধ সমাবেশ হবে না। তবে মুক্তিযোদ্ধারা যদি আসে সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২০
এসএইচডি/এইচএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।