ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যাংক কর্মকর্তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ন্যাড়া করে নির্যাতন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২০
ব্যাংক কর্মকর্তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ন্যাড়া করে নির্যাতন!

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শাহাদাৎ হোসেন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে সড়ক থেকে মাইক্রোতে উঠিয়ে অপহরণ করে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।  

রোববার (৬ ডিসেম্বর) ভোরে ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে মাথা ন্যাড়া ও হাত পা বাঁধা অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি খেজুর তলা এলাকায় অবস্থিত দীপ্তি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে।

 

এসময় দীপ্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক মো. শফিউল আজম খোকনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর অভিযোগে স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ফতুল্লার বক্তবলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি অগ্রণী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ টানবাজার শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী রওশন আরা সাউথইস্ট ব্যাংক হেড অফিসের এক্সিকিউটিভ অফিসার। তারা স্বামী-স্ত্রী দুই শিশুপুত্র নিয়ে শহরের ডনচেম্পার এলাকায় আলোর বাড়ির পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকেন।

ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে রাজি নন। তার অভিযোগ আমি মাদকাসক্ত নই, কিন্তু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন কেনো আমাকে সড়ক থেকে মাইক্রোতে উঠিয়ে অপহরণ করে বেধড়ক মারধর করে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে। আমি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিচার চাই।

শাহাদাৎ হোসেন জানান, মাইক্রোতে উঠিয়ে কয়েকজন একসঙ্গে অনেক চড় থাপ্পড় মারেন। এরপর চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় দীপ্তি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে প্রথমে আমার মাথা ন্যাড়া করে। এরপর আমার সম্পদ ও ব্যাংকে কত টাকা আছে জানতে চায়। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় লাঠি দিয়ে হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পেটায়। এক পর্যায়ে আমার হাত ও পা বেধে মারধর করে। রাতভর এভাবে নির্যাতন চলে। পুলিশ গিয়ে আমাকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে।  

এ বিষয়ে জানতে দীপ্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাউকে পাওয়া যায়নি।

শাহাদাতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার আড়ালে তার স্ত্রী রওশন আরার হাত রয়েছে। সে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের সঙ্গে চুক্তি করে শাহাদাতকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে। তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

তবে রওশন আরা শাহাদাতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শাহাদাতের সঙ্গে সাড়ে তিন বছর আগে প্রেম করে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাদের পরপর দু’টি পুত্র সন্তান হয়। এরপর জানতে পারি শাহাদাৎ আমাকে বিয়ে করার আগে রত্না নামে অন্য ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেন। তাকে নির্যাতন করায় সে শাহাদাতের সঙ্গে বিচ্ছেদ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যান।  

সম্প্রতি তার মা ও বোনদের কথায় আমাকেও নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। মন চাইলে আমাকে বাজার করে দিতো আবার অনেক সময় তার মা বোনদের সঙ্গে গিয়ে থাকতো। আমার ও শিশু সন্তানদের খোঁজখবর নিতো না। আমার সঙ্গে ভদ্র ভাষায় কথা বলতো না। আমি ইচ্ছে করলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারতাম। কিন্তু স্বামীর সংসার করবো বলে সব নির্যাতন সহ্য করেছি।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালককে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। এখনো ব্যাংক কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।