ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২০
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে সরকার ফাইল ফটো

ঢাকা: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও নিত্য নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একটি বড় টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

একই সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের টেকনোলজি ও সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে শিক্ষা কারিকুলাম পরিমার্জন ও ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের (এনএসডি) তত্ত্বাবধানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণকালে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইসিটি বিভাগ থেকে অনেক বড় উপস্থাপনা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎটা নির্ভর করছে কীভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে হ্যান্ডেল করবো। যদি আমরা এটাকে ঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে না পারি তাহলে আমাদের জন্য একটু অসুবিধা হবে। কারণ সব টেকনোলজি, উৎপাদন পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ম্যানপাওয়ার কমে যাবে আবার অন্য জায়গায় লাগবে। এ শিফটিংগুলোও করতে হবে। আমাদের ওয়ার্ক ফোর্সকে সেভাবে ডেভেলপ করে নিয়ে আসতে হবে। এগুলো আমরা যদি না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বা অর্থনীতি বা টেকনোলজির সব দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে যাবো।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ১০টি টেকনোলজিকে পয়েন্ট আউট করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী দিনে এ ১০টি টেকনোলজি সারা পৃথিবী বিট করবে। এ ১০টি টেকনোলজিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের বেশ কয়েকটা গার্মেন্টেস ও ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ রোবট ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। অনেক গার্মেন্টস একটা খাত মেকানাইজড করে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের ম্যানপাওয়ারকে শিফট করে দিতে হবে।

এ ১০টি টেকনোলজি হলো- অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস, ক্লাউড টেকনোলজি, অটোনোমাস ভেকেল, সিনথেটিক বায়োলজি, ভার্চ্যুয়াল অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবট, ব্লাক চেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং ইন্টারনেট অব থিংকস বা আইওটি। এ ১০টি টেকনোলজি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে লিড করবে। এ ১০টি টেকলোনজির সঙ্গে আমাদের ম্যাচ করতে হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনটি সমস্যা দেখা দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, মেশিন বা রোবট অনেক মানুষকে রিপ্লেস করে ফেলবে। এজন্য যারা চাকরি হারাবে তাদের পরিকল্পনা করে অন্য জায়গায় চাকরি দিতে হবে। এটা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ জার্মানি হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সব থেকে অ্যাডভান্স। কিন্তু সেখানে বেকারের সংখ্যা পৃথিবীর সব থেকে কম।

দ্বিতীয় সমস্যা হবে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে জ্ঞান আছে তা পরিপূর্ণভাবে ইক্যুপ্ট করতে পারবে না। সেজন্য আমাদের আরেকটু অ্যাডভান্স অ্যাডুকেশনে যেতে হবে। তৃতীয় বিষয় হলো- আমাদের ফিন্যান্সিয়াল বা ইকোনমিক পলিসিতে কিছু নতুন জিনিস আনতে হবে। কারণ প্রাথমিক বিনিয়োগটা বড় হবে। যার ফলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা আছে তাদের জন্য একটু অসুবিধা হতে পারে, নিজের টাকা দিয়ে ইক্যুপ্ট করা। সেজন্য রাষ্ট্র বা সরকার বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসতে হবে যাতে এ জাতীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাকআপ করা যায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এজন্য প্রস্তাব এসেছে একটা বড় টাস্কফোর্স গঠন করে আলাপ-আলোচনা করে এখন থেকেই কীভাবে কো-অপ্ট করবো। লেবার শিফটিং হলে কীভাবে শিক্ষা দিয়ে দক্ষ করবো। বিশ্বব্যাপী যে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হচ্ছে সেখানে দক্ষ তৈরি করে পাঠানো। টাস্কফোর্স চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের টেকনোলজি ও সমস্যার মধ্যে সামঞ্জস্য করে শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন কিছু ঢোকানো এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের (এনএসডি) তত্ত্বাবধানে ম্যাসিভ কর্মসূচি গ্রহণ করা।

কারিকুলাম পরিবর্তনে প্রয়োজন হলে একটা স্টিয়ারিং কমিটি বা জাতীয় একটি কমিটি গঠন করে সুপারভাইজ করে পরামর্শ দেবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তিনটি সেক্টর থাকবে- বায়োলজিক্যাল, ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল। এ তিন সেক্টরেই আমাদের কাজ করতে হবে।

প্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লব স্টিম ইঞ্জিন করতে দেড়শ বছর, টেলিফোন জনপ্রিয় করতে ৭৫ বছর, রেডিও ৩৮ বছর, টেলিভিশন ১৩ বছর লেগেছে ৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছাতে। এখন স্কাই টেকনোলজি বা স্যাটেলাইট টেকনোলজি ৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছেছে ৩৫ দিনের মধ্যে। মোবাইল ফোনের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এজন্য তিনটি সেক্টরেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটা সময় আসবে মানুষের শরীরে যদি একটা চিপস দেওয়া যায় তাহলে হাতের মুঠোয় শুধু কি-প্যাড থাকবে। ফোন লাগবে না। এ কি-প্যাড দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ অপারেট করা যাবে। টেকনোলজি ওই লেভেলে চলে যাবে, এজন্য আমাদের এগুলো ইক্যুপ্ট করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।