ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পথের ধারে পিঠার স্বাদে

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
পথের ধারে পিঠার স্বাদে পিঠার দোকানে ভোজনরসিকদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: ঋতুবৈচিত্রের ধারায় এখন অগ্রহায়ণ মাস। গ্রামে গ্রামে চলছে নতুন ধান থেকে চাল সংরক্ষণের কাজ।

কৃষাণ-কৃষাণী ব্যস্ত মাঠে বাড়ির উঠানে। ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসব। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের এই উৎসব ধরে রাখতে পাড়া-মহল্লায় শহরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলছে নানা আয়োজন, নানা অনুষ্ঠান।

শীতের আমেজ এখন সবখানেই। গ্রামই বলুন আর শহরই বলুন। দিন যাচ্ছে আর শীতের মাত্রা বাড়ছে। ভোরের প্রকৃতিতে থাকছে কুয়াশায় মোড়ানো চাদর। দিনের দুপুরে হালকা রোদ থাকলেও বিকেল থেকেই বইতে শুরু করছে শীতের হিমেল হাওয়া। শীতের ধকল সামনে নিতে যে যার মত করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

নতুন ধানের নতুন চালের নানা স্বাদের বাহারি পিঠাপুলি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ। প্রত্যেক শীতে গ্রামের বাড়িতে তো বটেই শহরের বাসা-বাড়িতেও চলে পিঠাপুলির আয়োজন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শহর ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যেই শহর এলাকায় বিভিন্ন রাস্তার পাশে দোকানিরা বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে জেঁকে বসেছেন। তৈরি করছেন ভাঁপা, চিতই, কুশলি, ঝাল, সবজি মেশানো ঝাল পিঠা। তবে শীতের এসব গ্রামীণ পিঠা পাওয়া ও খাওয়া নিয়ে শহুরে মানুষের মধ্যে একটা হাহাকার ভাব থাকে। কিন্তু এই দোকানিরা শহুরে মানুষের শীতের গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহারি এসব পিঠার স্বাদ আস্বাদনে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন। ইলেই যেকোনো মানুষ শীতের এসব পিঠার স্বাদ নিতে পারেন। বাসার পাশে, শহরের পথে পথে বা মোড়ে মোড়ে এসব পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে আপনার অপেক্ষায় শীতজুড়ে বসে থাকবেন ওই দোকানিরা।

ইদ্রিস আলী ও বেগুনী বেগম সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় বসবাস করেন। প্রতিবছরের মতো এবারও শহরের শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম সড়কের মোড়ে খান্দার এলাকায় সেই শীতের বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ওই দম্পতি।
এক লাইনে চুলা বসিয়েছেন সাতটা। একটি চুলা বানাচ্ছে ভাঁপা পিঠা। অন্যগুলোতে চিতই, ডিম চিতই, ঝাল-মিষ্টি কুশলি ও ঝাল পিঠা তৈরির কাজ চলে। কড়াই, পাতিল, চালের গুড়া, গুড়, নারিকেল, ডিম, শুঁটকি ভর্তা, তেলসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই দম্পতি এসব পিঠা তৈরি আর বিক্রি করেন।

গ্রামীণ এসব পিঠার স্বাদ আস্বাদনে শহুরে মানুষের ভিড় বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায় এসব দোকানে। ক্রেতা সাধারণ দোকানের তিন পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। চাহিদামতো পিঠা বানিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন তারা। ওই দম্পতির ব্যবসার কাজে সহায়তা করেন আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ।

বেগুনী বেগম ও ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে তারা এ ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন বিকেল থেকেই ভিড় শুরু হয় পিঠা কিনতে আসা শহুরে মানুষের। তাদের দোকানে ভাঁপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই ১৫ টাকা, ডিম চিতই ২৫ টাকা, ঝাল ও মিষ্টি কুশলি ১০ টাকায় বিক্রি করেন তারা। প্রতিবার শীতেই এ ব্যবসা করেন তারা। এ থেকে বেশ ভালোই আয় হয় তাদের। যা দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবেই চলে। শহরের সেউজগাড়ী মোড়, সাতমাথাসহ পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলো শীতের বাহারি পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন একাধিক দোকানি।

সাতমাথার ভ্রাম্যমাণ দোকানি শামসুল আলম, রায়দান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ভ্রম্যমাণ দোকানে সারাবছর ভাঁজিপুরির (পেঁয়াজু, ডাল পুরি, সবজি রোল ইত্যাদি) ব্যবসা করি। প্রতিবার শীতে পিঠাপুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ এ সময়টাই ক্রেতা সাধারণ বাহারি পিঠাপুলি বেশি খেয়ে থাকেন।

শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকার ইমতিয়াজ রহমান, নাসিম আলম, মনিরুল ইসলাম, রেশমী আক্তার, নুসরাত নিশি, সুরাইয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, বাসাবাড়িতে এসব পিঠার আয়োজন করা হয় না। পেশাগত কারণে অনেক সময় বাসার বাইরে থাকতে হয়। তাই বাসায় পিঠা বানানো হলেও তা খাওয়া হয় না। ফলে রাস্তার পাশের দোকানেই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।