ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘শুধু বন্দুক দিয়ে জঙ্গি দমন সম্ভব না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
‘শুধু বন্দুক দিয়ে জঙ্গি দমন সম্ভব না’

ঢাকা: জঙ্গিবাদ একটা ধারণা, বিশ্বাস। এটা ভুল পথে যাওয়া ব্যক্তি মস্তিস্কে ও হৃদয়ে থাকে।

শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে তা দূর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদে জড়ানো যারা ডিরেডিকেলাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদের মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক সাপোর্ট দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত ‘নব দিগন্তের পথে’ জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নয় জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

ভুল পথে, ভুল মতাদর্শে যারা বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, তাদের মধ্যে ৯ জন ফিরলেন নব দিগন্তের পথে। তারা হলেন- সিলেটের শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), তার স্ত্রী ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), কুমিল্লার আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে তারাদ ওরফে রামিসা (১৮), আবদুর রহমান সােহেল (২৮), চাঁদপুরের মােহাম্মদ হােসেন ওরফে হাসান গাজী (২৩), সাইফুল্লাহ (৩৭), ঝিনাইদহের সাইফুল ইসলাম (৩১), চুয়াডাংগার আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) এবং সাইদুর রহমান (২২)। তাদের মধ্যে ৬ জন জেএমবি এবং ৩ জন আনসার আল ইসলাম সদস্য ছিলেন।

কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আমরা যাদের সন্ত্রাসী বলি, সবাই সন্ত্রাসী নয়। কারো মনে সামান্য সহানুভূতি থাকে, একপর্যায়ে সাপোর্টার হয়ে যায়, এরপর এক্টিভিস্ট হয়, সে তখনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হয়ে যায় না। এরপরের ধাপে একস্ট্রিমিস্ট হয়। এই পর্যায়ে সে অন্য কারো মতাদর্শকে মানতে চায় না। একস্ট্রিমিস্ট হওয়ার পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তখন সবাইকে শত্রু মনে করতে থাকে।

তিনি বলেন, ভুল পথে যাওয়া ওই ব্যক্তির ভ্রান্ত ধারণাকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটা সে বিশ্বাস করে। তার ধারনায় আঘাত করতে হবে। যেটা শুধুমাত্র বন্দুক দিয়ে সম্ভব নয়। দরকার হয় ডিরেডিকেলাইজেশন বা বিজঙ্গিকরণ। একস্ট্রিমিস্ট থেকে টেরোরিস্ট হন একজন ব্যক্তি। তখন কোনো একটি নাশকতামূলক কাজের জন্য রওনা দেয়।

ডিরেডিকেলাইজেশনের কয়েকটি ধাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে এই রেডিকেলাইজড হওয়া ব্যক্তিদের স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট করতে হবে। তাদের সক্ষমতা নষ্ট করতে হবে। তাকে গ্রুপের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাকে ধরে আনতে হবে। এরপর তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে বিচারের মুখোমুখি না ডিরেডিকেলাইজেশনে সম্পৃক্ত করতে হবে। তা নিয়ে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।

জঙ্গি দমনে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাই মিলে কাজ করলে তা হবে মাত্র ২৫ দশমিক ৭ ভাগ কাজ। সমাজের সবাইকে নিয়ে এই ভয়াল দৈত্যকে মোকাবিলা করতে হবে। জঙ্গিবাদ একটা ধারণা, বিশ্বাস। এটা মস্তিস্কে ও হৃদয়ে থাকে। শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে তা দূর করা যাবে না। এক্ষেত্রে  শুরুতে অপারেশনাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু আমরা এই পন্থায় সফল হয়েছি তাই এবার আমরা এই জঙ্গিবাদের মূল উৎপাঠন করতে আমরা একটা বাতায়ন খুলে দিতে চাই। যারা শুধুমাত্র মানসিকভাবে দূষিত হয়েছে, তারা যেন আলোর পথে আসতে পারে। তারা অগ্রদূত হয়ে যেন অন্যদের এই পথে নিয়ে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
এসজেএ/পিএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।