ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

১০ টাকায় দেখা মিলবে টাইটানিক-সৌরজগত

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
১০ টাকায় দেখা মিলবে টাইটানিক-সৌরজগত

ঢাকা: ১৯১২ সালে হিমশৈলের ধাক্কায় দুই টুকরো হয়ে গিয়েছিল টাইটানিক জাহাজটি। আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে আজও ঘুমিয়ে রয়েছে টাইটানিকের অবশিষ্টাংশ।

তবে এই জাহাজ নিয়ে এখনো কৌতূহলের শেষ নেই বিশ্ববাসীর মনে। সৌরজগত নিয়েও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। মাত্র ১০টাকা খরচ করে নগরীতে এগুলোর দেখা মিলবে শিগগিরই।

রাজধানীতে ছুটির দিন বেড়াতে যাওয়ার জায়গার খুবই অভাব।  ছেলে-মেয়েকে নিয়ে, তাই অনেকে ভাবেন কোথায় যাবেন। নতুন করে বিনোদন ও জ্ঞানচর্চার জায়গা তৈরি হয়েছে আগারগাঁওয়ের শেরে-বাংলা নগরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে। এখানে বানানো হয়েছে টাইটানিক জাহাজ। তবে, এটারও এখনো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে নির্মিত হয়েছে সৌরজগত। মূলত সবুজ ঘাসের গালিচা দিয়ে এটা তৈরি হয়েছে। সবুজ ঘাসের কক্ষপথে নামকরণ করা হয়েছে। প্রতিটা ঘাসের সারি দিয়ে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের নাম করণ করা হয়েছে।


ডাইনোসর  বলতে জনপ্রিয় ধারণায় একটি  বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণীগোষ্ঠীকে বোঝায়। এরা পৃথিবীর  প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান এই প্রভাবশালী প্রাণীরা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে। এটা নিয়েও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ডাইনোসরের মূর্তি নির্মিত হয়েছে চত্বরে।

শিশুরা যাতে বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয় সেজন্য এফ-৬সহ মোট তিনটা প্লেন নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। পর্যটকেরা এগুলোতে চড়ে চলন্ত প্লেনের আনন্দিত হবেন। অচিরেই এগুলো চালু করা হবে। বর্তমানে তিনটি প্লেনের শেড তৈরি করা হচ্ছে।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান কাম-ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে টাইটানিক জাহাজ নির্মাণ কাজ চলমান। এছাড়া এফ-৬টিসহ তিনটি প্লেনে প্রযুক্তিগত কাজ চলছে। এগুলো অচিরেই ঢেলে সাজানো হবে। বিভিন্ন জায়গায় ফান্ড ও প্রকল্পের আওতায় এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রধান ভবন সংস্কার করে জাতীয় জাদুঘরকে আরো দৃষ্টিনন্দন, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। জাদুঘর চত্বরে নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে বেইজমেন্টসহ দু’টি ১৩তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন ভবন। এছাড়া একটি দ্বিতল ও দু’টি ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে।

জাদুঘরের প্রধান ভবন থেকে অফিস ও স্টোর স্থানান্তর করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে গ্যালারির সংখ্যা বাড়ানো ও গ্যালারিগুলোতে নতুন আঙিকে দর্শনার্থীদের পরিদর্শনের জন্য নির্দশনগুলো উপস্থাপন করা।

বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণাধীন সাতটি শাখা জাদুঘর চালু রয়েছে। এছাড়াও আরও নতুন নতুন জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। জাদুঘরের প্রধান ভবন থেকে অফিস, নির্দশন স্টোর, অডিটোরিয়ামগুলো প্রস্তাবিত নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হলে জাদুঘরের গ্যালারির সংখ্যা বাড়বে। এতে সংরক্ষিত নির্দশনগুলো প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। ফলে জাতীয় জাদুঘরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আরও ব্যাপক পরিসরে ও দৃষ্টিনন্দনভাবে প্রদর্শন করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে জাদুঘরের প্রশাসনিক কাজের গতি ও দক্ষতা বাড়বে।
প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার, যুগের পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে ক্রমেই দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন এ জাদুঘরে আসছে হাজার হাজার দর্শনার্থী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও জাদুঘর সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এটি পরিচালিত হচ্ছে। জাদুঘরটিতে মোট ৭টি গ্যালারি, প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য দুটি আলাদা পথ এবং ঘুরে দেখানোর জন্য গাইডলাইন রয়েছে। শনিবার ও রোববার আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে সন্ধ্যার পরে টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

সপ্তাহের শনি থেকে বুধবার পর্যন্ত জাদুঘরটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন। তবে ৫ বছরের নিচের শিশুর জন্য প্রবেশমূল্য ফ্রি। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এবং সব সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।

চারতলা এই জাদুঘরের প্রথম ও দোতলায় গ্যালারি, তেতলায় অফিস এবং চারতলায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি অবস্থিত। ১ম ও ২য় তলায় সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি, বায়োলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি, ফান সায়েন্স এবং ইয়ং সায়েন্টিস্ট প্রোজেক্ট গ্যালারি রয়েছে।

এছাড়াও ভবনটিতে একটি লাইব্রেরি, ওয়ার্কশপ ও অডিটোরিয়াম রয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সিঁড়ি ও একটি লিফট রয়েছে ভবনে। ভবনের সামনে একটি এবং একটি ছোট যুদ্ধবিমান রাখা হয়েছে। জাদুঘর প্রাঙ্গণে একসঙ্গে ৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হয়েছে। রয়েছে অগ্নি নির্বাপণের সব ধরনের ব্যবস্থা। তবে জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলা এবং জোরে শব্দ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দর্শনার্থীর সঙ্গে বহন করা ব্যাগ, ক্যামেরা ইত্যাদি কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

এই জাদুঘরের সঙ্গে নিবন্ধিত দেশের জেলা ও উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৯০টি বিজ্ঞান ক্লাব রয়েছে। বিজ্ঞান ক্লাবগুলো জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষাদান, বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটাতে স্থাপন করা হয়েছে।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী জানান, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর ঢেলে সাজানো হচ্ছে। যুদ্ধ বিমানগুলোতে অর্জিনাল রূপ দেওয়া হচ্ছে প্রকৌশলী-পাইলটদের মাধ্যমে। কোস্টগার্ড কিছু নৌ জাহাজ দেবে এগুলোও প্রদর্শন করা হবে। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটাতে স্থাপনে এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।