ভাসানচর (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে তারা কেউ ছিলেন কক্সবাজারের কুতুপালংয় ক্যাম্পে, কেউ বালুখালী ক্যাম্পে আবার কেউ ছিলেন নয়াপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা। এখন তারা আশ্রয় নিয়েছেন ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
ভাসানচর ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায় রোহিঙ্গারা নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নতুন জায়গায় নতুনভাবে বাঁচার তাগিদে কেউ দোকানপাট দিয়েছেন। কেউ কৃষিকাজে যুক্ত হচ্ছেন। কেউ সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেউ দিন মজুরের কাজ করছেন। কেউ কেউ সেলুন দিয়েছেন। কেউবা বিক্রি করছেন পিঠা।
রোহিঙ্গারা কেউ কেউ বাড়ির সামনে ছোট পরিসরে চাষাবাদ করছেন। এমনই এক রোহিঙ্গা পরিবারকে দেখা গেল বাড়ির সামনে পেঁয়াজ-রসুন বুনতে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করছিলেন। তাদের সাথে আলাপ করে নাম-পরিচয় জানা গেলো। স্বামীর নাম মোহাম্মদ সৈয়দ ও স্ত্রী সানজীদা আক্তার। তারা ছিলেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে। সেখানে ছিলেন চার বছর। ভাসানচরের রোহিঙ্গা স্থানান্তরের দ্বিতীয় দফায় এখানে এসেছেন।
এই দম্পতি জানায়, পেঁয়াজ-রসুন বোনা অনেক সহজ কাজ। ফলনে বেশি সময় লাগে না। বাড়ির সামনে পেয়াঁজ-রসুন বুনে সারা বছরে নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মেটানো যাবে। বাজার থেকে কেনার প্রয়োজন আর হবে না। তাদের মতো অনেক রোহিঙ্গা পরিবার পেয়াঁজ-রসুন বুনছে বলেও জানান তারা।
রোহিঙ্গা হাশেম উল্লাহ কাজ করছেন খাদ্য গুদামে। শ্রমিক হিসেবে কাজ করে প্রতিদিন আয় করেন ৩০০ টাকা। ভাসানচরে থাকার জায়গা খুব ভালো। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ভালো আছেন বলে জানান তিনি।
বালুখালী থেকে এসে ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছেন এহসান উল্লাহ। তিনি ছোট একটি মুদি দোকান দিয়েছেন। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেনাবেচা করেন। নুর আলম কুতুপালং থেকে এসে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান দিয়েছেন। তার আয়ও প্রতিদিন ভালোই হয় বলে জানান।
রোহিঙ্গা নারীরাও বসে নেই। তারাও নানা কাজে জড়িত হতে চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গা নারী সুমাইয়া সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি জানান, সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে পোশাক তৈরি করবেন। এ থেকে আয় করতে চান তিনি।
ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য নানামুখী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ( বিআরডিবি)। সংস্থাটি সেলাই, কৃষি, মাছ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে।
বিআরডিবির যুগ্ম পরিচালক সুকুমার চন্দ্র দাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা ৫ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছি। এর মধ্যে রয়েছে সেলাই, কৃষি, মাছ, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন। প্রতি ব্যাচে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যেই ৫০০ রোহিঙ্গাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর চলতি ব্যাচে আরো ২৫০ জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ভাসানচর প্রকল্প পরিলাচক কমোডর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, এখানকার রোহিঙ্গারা যেন কাজে যুক্ত হতে পারে সে জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোও রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে ২২টি বেসরকারি সংস্থা এখানে যুক্ত হলেও এখন ৪০টিরও বেশি বেসরকারি সংস্থা এখানে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের কোনো না কোনো কাজে সম্পৃক্ত করতে সবাই চেষ্টা করছেন।
কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে ৭ হাজার ৯ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
টিআর/এমজেএফ