ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মসজিদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা, মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
মসজিদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা, মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ৫৩৯ বছরের পুরাতন মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের প্রায় ৮৩ শতাংশ জায়গায় স্থাপনা ভাঙচুর, দখলের চেষ্টা ও অবৈধভাবে বাণিজ্যিক করণের মাধ্যমে পার্ক ও মার্কেট নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী।

এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে মসজিদের জমির ওপর আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ নিয়েছেন বলে জানায় মসজিদ কমিটি।

এ বিষয়ে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ শহরেরর চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, শহরের মণ্ডলপাড়ায় প্রায় ৫৩৯ বছর আগের বাবরীয় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। আমাদের পূর্ব পিতামহ মরহুম মীর শরিয়ত উল্লাহর পূর্ব পুরুষ ও তার পরবর্তী বংশধররা এ মসজিদ ও আশপাশের জমি খাদেমী সূত্রে দেখভাল করছেন কয়েকশত বছর ধরে। ১৯৩৫ সালে ওই মসজিদ ও আশপাশের মোট ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ জায়গা মরহুম মীর শরিয়ত উল্লাহ ওয়াকফ এস্টেট হিসেবে তালিকাভুক্ত (নং ২০৪০) হয় এবং ব্রিটিশ পর্চা (সিএস ৩২০ দাগ) অনুযায়ী মোট ১৬ শতাংশ জমি পাকা মসজিদ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। পাশাপাশি (সিএস ৩২১ দাগ) অনুযায়ী বাকি জায়গাটি শরিয়ত উল্লাহর বংশধরদের নামেই লিপিবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে তথা এসএ পর্চা অনুয়ায়ী (এসএ ৫৬৬ ও ১৯৩) জায়গাটি শরিয়ত উল্লাহর বংশধরদের ও মসজিদের নামেই লিপিবদ্ধ হয়। একই ভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরএস পর্চাতেও (আরএস ৭০৬, ৭০৭) উক্ত ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমি মসজিদ কমিটি ও এস্টেটের নামেই লিপিবদ্ধ হয়েছে। মীর শরিয়ত উল্লাহ (মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদ) ওয়াকফ এস্টেটের মোট ৮২ দশমকি ৯০ শতাংশ জমিটি পুরোটাই এ ওয়াকফ এস্টেটের নিজস্ব সম্পত্তি।

তিনি মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে সেটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী মৌখিকভাবে ওয়াকফ এস্টেটের জায়গাটি কখনও সিটি কর্পোরেশনের, কখনও নিজের পৈত্তিক সম্পত্তি বলে দাবি করেন। এরই অংশ হিসেবে তার নির্দেশে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে আমাদের এস্টেটের পাশ্ববর্তী স্থাপনা উচ্ছেদের সময় আমাদের মসজিদের পাশে এস্টেটের নিজস্ব সম্পত্তিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদ চালিয়ে মসজিদের ১৬টি ঘরের মধ্যে ১১টি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। বিষয়টি আমরা ২০১৭ সালে ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের প্রশাসককে লিখিতভাবে জানাই। বিষয়টি ওয়াকফ প্রশাসন লিখিতভাবে ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে অবগত করেন এবং ওয়াকফ সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করে সীমানার অভ্যন্তরে উচ্ছেদ না চালাতে অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে মসজিদের পূর্ববর্তী কমিটি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে ওই উচ্ছেদের ক্ষতিপূরণ চেয়েও একটি আবেদন করেন। কিন্তু আমরা এর কোনো সদুত্তর পায়নি। এরই মধ্যে মেয়র আইভী আমাদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে আমাদের লিখিত আবেদন করতে বললে আমরা মসজিদের বর্তমান কমিটি গত ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মেয়রের কাছে একটি আবেদন করি। কিন্তু সীমানা প্রাচীর তৈরি না করে উল্টো কোনো প্রকার মৌখিক বা লিখিত নোটিশ ছাড়াই ওয়াকফ এস্টেটের তথা মসজিদের নিজস্ব জায়গার উত্তর-পূর্ব কোণে পুকুর পাড় ঘেষে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে। বিষয়টি পুনরায় আমরা লিখিতভাবে ওয়াকফ প্রশাসন বাংলাদেশকে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর অবগত করি। এ অবগত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের তথা মসজিদ কমিটিকে সিটি কর্পোরেশনের এ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয় এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করা হয়।

তিনি বলেন, মেয়র আইভীর এহেন অনৈতিক অবৈধ কর্মকাণ্ড চলমান অবস্থাতেই বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমাদের মীর শরিয়ত উল্লাহ (মণ্ডল পাড়া জামে মসজিদ) ওয়াকফ এস্টেটের জায়গায় জেলা মডেল মসজিদ স্থাপনের জন্য মসজিদেও ৪৩ শতাংশ জমির ওপর জেলা মডেল মসজিদটি নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এরপর সব কার্যক্রম স্থগিত থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ওয়াকফ এস্টেটের সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চুক্তি জেলা মডেল মসজিদের টেন্ডার হওয়ার পর মেয়র আইভী অযাচিতভাবে গত ১২ জানুয়ারি মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে তার নাম সম্বলিত একটি নাম ফলক লাগিয়ে দেন। এমনকি আমাদের অনাপত্তি দেওয়া ৪৩ শতাংশ জমির বাইরের বাকি প্রায় ৪০ শতাংশ জমিও তিনি গ্রাস করার পায়তারা শুরু করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন মার্কেট, পার্ক নির্মাণ করবেন বলে জানিয়ে দেন। সম্প্রতি মেয়র আইভী অনেকটা গায়ের জোরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মসজিদটি ভেঙে ফেলে পুরো এস্টেটটি দখলের চেষ্টা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নারায়ণগঞ্জ  ৪র্থ সহকারী জজ আদালতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা দায়ের করি এবং আদালতের বিচারক পুরো বিষয়টি অনুধাবন করে সেখানে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মসজিদ কমিটির পক্ষে মামলার আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন মিয়া, মসজিদ কমিটির সভাপতি মোতওয়ালী সাখাওয়াত উদ্দিন আহমেদ, সহকারী মোতওয়ালী বরকতউল্লাহ খন্দকার, সভাপতি আব্দুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আজাহারুল ইসলাম, সদস্য রফিকউদ্দিন আহমেদ, ইব্রাহীম বাদশা খন্দকার, শাহাজাদা ও আজমেরী হোসেন খন্দকার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।