কক্সবাজার: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিকারীরা পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি।
রোববার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য’ কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যখন নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে তখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল আমাদের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছিল তারা। বাংলাদেশের সঙ্গে একই সাথে যুদ্ধ করেছে ভারতের সেনা বাহিনী। যেখানে ১৮ হাজার সৈন্য মারা গেছে।
‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হওয়ার দীর্ঘ সংগ্রামে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ হয়েছে। এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে আমরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ,’ যোগ করেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে ভারতের সৈন্যদের রক্ত আছে। আর সেই বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অনেক রাষ্ট্র প্রধান অনেকবার আসছেন। কিন্তু কোথাও বিরোধিতা নেই। তাহলে ভারতের নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে এত বিরোধিতা কেন? এরা সেই পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি যারা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বাংলাদেশে কথিত ভারত বিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে ছিল। যারা এদেশে জঙ্গির উত্থান করেছিল। এখন সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে ঐক্য করার।
এসময় তিনি বলেন, সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা দেশ ও ধর্মের শত্রু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে সকলেই মিলেমিশে সুখে ও শান্তিতে বসবাস করবে এবং প্রত্যেকে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম প্রতিপালন করবে। জাতির পিতার আদর্শ ও চেতনাকে নষ্ট করে মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিবাদ সৃষ্টি করতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে একটি সুবিধাবাদী দল। তারা ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে সকল ধর্মের মানুষের সঙ্গে খেলা করে। তারা পাকিস্তানিদের পেতাত্মা। তাদের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
সন্ধ্যায় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের কেন্দ্রীয় আহবায়ক মেজর (অব:) এএসএম শামসুল আরেফিন।
উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিল এদেশের দারিদ্রপীড়িত মানুষকে মুক্ত করবেন। এমন করে দেশকে গড়ে তুলবেন যাতে বিশ্বের বুকে বাঙালি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ক্ষুধা দারিদ্র দূর করতে তিনি সেইভাবে কর্মসূচি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা দিতে গিয়ে তিনি দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। বঙ্গবন্ধু কখনো মাথানত করেননি, আর্দশচ্যুত হননি। দুর্ভাগ্য তিনি যে দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন সেই স্বাধীন দেশেই তাকে হত্যা করা হয়। এটা কেউ কল্পনাও করেনি, বিশ্বাস করতেও পারেনি। কারণ তিনি এদেশের মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি এদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। কৃষক শ্রমিকের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে তার রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এদেশে আর মুক্তিযুদ্ধের লড়াই হবে না। এখন হবে স্বাধীনতা রক্ষা করার লড়াই। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের ঐক্যের কক্সবাজার জেলা শাখার আহবায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল করের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনিরুজ্জামান মনির, মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য কক্সবাজার জেলা শাখার উপদেষ্টা আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, যুগ্ম আহবায়ক শামসুল আলম মন্ডল ও সদস্য সচিব সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়ন্ত আচার্য্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর হায়দার চৌধুরী রোটন।
আলোচনা সভা শেষে আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য কক্সবাজার জেলা শাখার ঘোষিত ৩টি স্থানের কর্মসূচির মধ্যে ২১ মার্চ রোববার শহীদ দৌলত ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। এছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৩ মার্চ ঈদগাঁও স্টেশন এবং ৩০ মার্চ রামু চৌমুহনী স্টেশনে একই অনুষ্ঠানমালা থাকছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
এসবি/এমএইচএম