ঢাকা, সোমবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা: তৎকালীন ইউএনও’র দায়িত্ব অবহেলার তদন্তে ডিসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা: তৎকালীন ইউএনও’র দায়িত্ব অবহেলার তদন্তে ডিসি

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গণপিটুনি দিয়ে আবু ইউনুস সাহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা তদন্ত শুরু করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ঘটনাস্থল বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে দিনভর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।

এর আগে, তদন্ত কার্যে সহায়তার জন্য ২১ মার্চ গণবিজ্ঞাপ্তি জারি করেন জেলা প্রশাসক। যা ওই এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক আবু ইউনুস সাহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

ওই গণবিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে কোরআন অবমাননার অভিযোগে আবু ইউনুস সাহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা ও পরে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা প্রাক্তন পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহারের (পরিচিতি নং- ১৭৪৬৭) দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তাই ২৫ মার্চ বেলা ১১টায় ওই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সর্বসাধারণকে উপস্থিত থেকে তদন্ত কাজে সহায়তা করতে গণবিজ্ঞাপ্তি জারি করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।  

২১ মার্চ জারি করা গণবিজ্ঞাপ্তি মোতাবেক বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে তদন্ত কার্য শুরু করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এ সময় তিনি ১৫ জনের লিখিত বক্তব্য নেন। তদন্ত শেষে জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক এটি একটি প্রশাসনিক তদন্ত। তদন্ত শেষে যথা সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।  

পুলিশ জানায়, আবু ইউনুস সাহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে ওপর পড়ে যায়। তখন কোরআন ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।  

>>>আরও পড়ুন...বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা: তৎকালীন ইউএনওর দায়িত্ব অবহেলার তদন্তে গণবিজ্ঞপ্তি

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। তখন উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। তখন বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তখন বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান রুবায়াত সুমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।  

এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও পরে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ