সাতক্ষীরা: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সফরসূচি অনুযায়ী ২৭ মার্চ সকাল ৯টা ৫০ মিনিট থেকে ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির পরিদর্শন করবেন তিনি।
এ বিষয়ে যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী বাংলানিউজকে জানান, যশোরেশ্বরী কালীমন্দির হলো দেবীর ৫১টি পীঠের মধ্যে অন্যতম ও শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিতি। এই শক্তিপীঠে বা মহাপীঠে সতীর করকমল বা পাণিপদ্ম পতিত হয়েছিল। এটি একটি জাগ্রত শক্তি পীঠস্থান। উপমহাদেশের ধর্ম, সংস্কৃতি এবং ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের অসাধারণ নিদর্শন এই মন্দির ও কালীমূর্তি। এটি কৃষ্ণবর্ণ কষ্ঠিপাথরে নির্মিত ভয়ঙ্কর করালবদনা ও একই সঙ্গে মনোহর কালীমূর্তি। এখানে মূর্তি একমাত্র মুখমণ্ডল অনাবৃত এবং এর নিচের অংশ আবৃত।
পীঠমন্দিরের ভৈরবের নাম চণ্ডভৈরব। এটি একটি তীর্থস্থান। সত্যযুগ থেকে অর্থাৎ অনাদিকাল থেকে দেবী এখানে, এই পবিত্রস্থানে অধিষ্ঠিত। তাই অনাদিকাল থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত এই জাগ্রত শক্তিপীঠস্থানে দেশ-দেশান্তর থেকে নিত্যদিন পূজারি, ভক্ত ও পর্যটকদের আগমন হয়ে থাকে।
কবিরামের ‘দিগ্বিজয় প্রকাশ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে অনরি নামে একজন ব্রাহ্মণ ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী দেবীর শতদ্বারযুক্ত মন্দির নির্মাণ করে দেন। নানা সামাজিক-প্রাকৃতিক কারণে সে মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক পরে ধেনুকর্ণ নামে একজন ক্ষত্রিয় নৃপতি এখানে মগ্ন মন্দির সংস্কার করেন।
দিগ্বিজয় প্রকাশ থেকে জানা যায়, রাজা লক্ষণ সেন প্রাচীন যশোর রাজ্যের ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত শক্তিপীঠ শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী মন্দির সংস্কার এবং মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণে চণ্ডভৈরবের ত্রিকোণ মন্দির নির্মাণ করে দেন। বিভিন্ন ধর্মবেত্তা, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকগণ সমাজ ও লোকইতিহাস বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন, অষ্টম শতাব্দীতেও এখানে মন্দির ছিল। প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে এ স্থান পরিত্যক্ত হয় ও বেশ কিছুদিন জন সমাজের অন্তরালে চলে যায়। রাজা লক্ষন সেন ত্রয়োদশ শতাব্দিতে সে শতদ্বারযুক্ত মন্দির পুনর্নির্মাণ ও চণ্ডভৈরবের নতুন ত্রিকোণ মন্দির নির্মাণ করেন। মধ্যযুগের বাংলাদেশে বারোভুঁইয়াদের অন্যতম প্রধান নৃপতি রাজা প্রতাপাদিত্য রায় যশোহর রাজ্যে যমুনা ও ইছামতী নদীর সঙ্গমস্থল মুক্তবেণীতে তার নতুন রাজধানী শহর গড়ে তুলবার সময় (১৫৮০-৮৩) বনমধ্যে এ মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় খুঁজে পান। তিনি ও তার সেনাপতি খাজা কামালউদ্দিন বা কমল খোজা দূর নদীতীর থেকে ধুম উদগীরণ দেখে এখানে আসেন ও বনমধ্যে এ মন্দির পুনরাবিষ্কার করেন। তিনি যশোরেশ্বরী দেবীকে ভাগ্যদেবতা মেনে দেবীর চকমিলান মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। এ মন্দিরের চারপাশে তিনি নতুন রাজধানী শহর গড়ে তুলে নাম রাখেন যশোরেশ্বরীপুরী। প্রতাপের পরবর্তীকালে এর নাম হয় যশোরেশ্বরীপুর। বর্তমানে ঈশ্বরীপুর।
যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী বাংলানিউজকে জানান, এই মন্দিরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার নিত্যপূজা হয়। মোদীজি এখানে স্বল্প সময়ের জন্য আসবেন এবং পূজা দেবেন।
এদিকে, প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শ্যামনগরে সাজ সাজ রব পড়েছে। মন্দির সংস্কার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সব কিছু যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছে প্রাণ। প্রস্তুত করা হয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড। গ্রহণ করা হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
এনটি