ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সংবাদ সংগ্রহকালে ছাত্রলীগের হামলার শিকার ঢাবির দুই সাংবাদিক

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
সংবাদ সংগ্রহকালে ছাত্রলীগের হামলার শিকার ঢাবির দুই সাংবাদিক প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদার ও বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আবিদ হাসান রাসেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ক্যাম্পাসে সংবাদ সংগ্রহকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় এ হামলা চালানো হয়।

আহতরা হলেন- প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদার ও বাংলা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আবিদ হাসান রাসেল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় মোদীবিরোধী মিছিল শুরু করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। জোটের মিছিল শেষে টিএসসি থেকে জোটের নেতা-কর্মীরা স্মৃতি চিরন্তন চত্ত্বর এলাকার দিকে যেতে থাকলে সেখানে তাদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আসিফ হাওলাদারকেও মারধর করে তারা। এতে তার মাথা ফেটে যায়। মুখে প্রচন্ড আঘাত করা হয়।

হামলার বিষয়ে আসিফ হিমাদ্রি বলেন, আমি সংবাদ সংগ্রহ করতে ভিসি চত্ত্বরের দিকে গেলে সেখানে আমার উপর হামলা করে। আমি আমার মোবাইল ফোনও বের করিনি। কিন্তু তারা আমাকে ছাড়েনি। ভিসি চত্ত্বর থেকে ১০ থেকে ১৫ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আমাকে টানা হেচড়া করতে করতে মল চত্ত্বরের অন্ধকার দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মারতে মারতে মাথা ফাটিয়ে ফেলে। তারা আমার সারা শরীরে আঘাত করেছে। হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সহ-সভাপতি মিলনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানান।

অপর দিকে ছাত্রজোটের উজ্জ্বল বিশ্বাস, কামরুল হাসান, অর্নব, মাইনুল, নাঈম, সাকিব আবদুল্লাহ , মাইন আহামেদ, রুবেল হোসেন, মাহমুদা দিপা, রাফিন জয়, মাহমুদ, আরিফ, সজিব আহত হন।

এর পূর্বে  বিকালে ৪ টায় ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় জেয়াফতের আয়োজন করা হয়।  জেয়াফত অনুষ্ঠানের আগে একই স্থানে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি উৎফল বিশ্বাস। জেয়াফত অনুষ্ঠান আয়োজনের আগমুহুর্তে আয়োজনকারীদের উপর হামলা চালায় উৎফল বিশ্বাসের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় হামলার ভিডিও ধারণ করতে গেলে সেখানে রাসেলের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রিয়াদ, সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক তানসেন শেখ, বিজয় একাত্তর হলের দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তামিম, ছাত্রলীগ কর্মী নুরুল আমিন ও শাকিল রেজা উপস্থিত থেকে সাংবাদিক রাসেলকে মারধর করেন।

হামলার শিকার আবিদ হাসান রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে কিছু লোক টিএসসিতে খাবার বিতরণ করছিলো। সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ছবি তুলছিলাম। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠি সোঠা নিয়ে তাদের উপর হামলা করে, তাদের ব্যানার ছিড়ে ফেলে। আমি এসবের ছবি তুলছিলাম। এসময় তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। তখন আমি আমার সাংবাদিক পরিচয় দেই। আমার গলায় প্রেস আইডি কার্ডও ঝুলানো ছিলো। তারা আমার ফোন ও আমার আইডি কার্ড কেড়ে নিয়ে যায়। আমি বারবার বলতে থাকি, আমি সাংবাদিক। তারপরও তারা আমাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে মারতে মারতে টিএসসির সঞ্জীব চত্ত্বর থেকে ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক দফা হামলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আমি আত্মরক্ষার জন্য টিএসসির ভিতরে যেতে চাইলে সেখানেও আরও এক দফা মারধর করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন দেওয়া হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এসকেবি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।