ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সুরমার তীর কেটে মাটি যাচ্ছে ইউপি সদস্যের ইটভাটায়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
সুরমার তীর কেটে মাটি যাচ্ছে ইউপি সদস্যের ইটভাটায়

সিলেট: যাদের কাছে প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষা পাওয়ার কথা, তারাই চালাচ্ছেন ধ্বংসযজ্ঞ। একে তো বসতির পাশে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা, সেসঙ্গে ইটভাটার মাটির যোগান দিতে কেটে নেওয়া হচ্ছে সুরমা নদীর তীরের মাটি।

প্রতিদিন শত শত ট্রাক্টর মাটি কেটে মজুত করা হচ্ছে ইউপি সদস্যের মালিকানাধীন ফ্রেসকো নামক ইট ভাটায়। শ্রমিক দিয়ে নদী তীরের মাটি কাটিয়ে নিচ্ছেন সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য দিলোয়ার হোসেন। মাটি কেটে গহিন করা হচ্ছে নদীর তীর।

বিনা বাধায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে মাটি কেটে নিলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরও বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কুশিটুক নামক এলাকায় সুরমার তীরে সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাইপ লাইনের পাশেই প্রায় এক কেদার (৩০ শতক) জায়গা থেকে গহিন করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।

মাটি কাটার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা জানান, দিলোয়ার মেম্বার মাটি কাটাচ্ছেন। এই মাটি যাচ্ছে কিছু অদূরে তার ইটভাটায়। প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে বিকাল পর্যন্ত মাটি কাটা হয়। ট্রাক্টর প্রতি গাড়ি মাটি তিন শ’ টাকা করে বহণ করছেন বলেও জানান শ্রমিকরা।

এসময় নারী পুরুষ নির্বিশেষে অন্তত একডজন শ্রমিক মাটি কাটার কাজে নিযুক্ত থাকতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের প্রভাবশালী সদস্য দিলোয়ার হোসেন মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটায়। মাসাধিক কাল ধরে এভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। কেবল এই স্থানে নয়, এর আগেও নদী তীরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে গহীন গর্ত করে রেখেছেন। যে কারণে বর্ষায় ওইসব এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়।

নদী তীর ধ্বংস করে মাটি কেটে নিলেও এলাকার লোকজন ভয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান না। তাছাড়া পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই ইউপি সদস্য বসতির কাছে ইটভাটা তৈরি করেছেন। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হলেও কেউ তার ভয়ে কথা বলেন না।

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ বলেন, কেবল মুক্তিরচক নয়, ইউনিয়নের মীরের চক, পীরের চক, মুরাদপুর, নয়াবস্তি, সোনাপুর এলাকায় জনবসতির কাছে আরো ইটভাটা রয়েছে।

তবে নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ওই জায়গা ইউপি সদস্য নাকি ইজারা নিয়ে মাটি কাটাচ্ছেন। বর্ষায় প্লাবনে সেই স্থান ভরাট হয়ে যাবে।

জেনেও বাধা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমি দেখিনি, যতটুকু জানি ব্যক্তি মালিকানা জায়গা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে নদী তীরের মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কেউ জানায়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের আব্দুল করিম কিম বাংলানিউজকে বলেন, আইন অনুয়ায়ী নদী হলো জীবন্ত স্বত্বা। যে কারণে নদী তীর থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে নেওয়া যথারীতি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ-কেউই সেই দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণে নদী রক্ষা করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. এমরান হোসেন বলেন, নদীর পার কেটে নেওয়া, টিলা কাটা, পুকুর ভরাট পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন অপরাধে জরিমানা করা হচ্ছে। নদী তীর কেটে মাটি নেওয়াটাও একটি অপরাধ। সে ক্ষেত্রে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। বিষয়টি জানামাত্র তিনি অভিযানে নামার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য দিলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
এনইউ/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।