ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মালাকারটোলা গণহত্যায় নিহতদের শহীদ স্বীকৃতির দাবি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
মালাকারটোলা গণহত্যায় নিহতদের শহীদ স্বীকৃতির দাবি 

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুরান ঢাকার লোহারপুলের মালাকারটোলার হিন্দু মহল্লার ১২ জনকে হত্যা করে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শহীদের স্বীকৃতি পাননি নিহতরা।

একই সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে শহীদের স্বজনদের কোনো খোঁজ-খবরও নেওয়া হয়নি। মালাকারটোলা গণহত্যায় নিহতদের শহীদের স্বীকৃতিসহ শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তার দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (২৭ মার্চ) পুরান ঢাকার সুত্রাপুরের মালাকারটোলার গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদ স্মৃতি ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। মালাকারটোলা শহীদ স্মৃতি সংসদ প্রতি বছর এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করে।

মালাকারটোলা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী পরেশ চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ২৭ মার্চ ভয়াল রাতে আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে মালাকারটোলা মন্দিরের পাশে নিয়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পড়ে লোহারপুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যাই। বেঁচে গেলেও আমার শরীরে দুটি গুলি লাগে। একটি গুলি আমার বাম কাঁধে ও পরেরটি আমার গালভেদ করে কানের নিচ দিয়ে চলে গেলে আমি লোহারপুল থেকে খালে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পরে খালের আশেপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। আমি প্রায় তিন মাস পর সুস্থ হয়ে কলকাতায় গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। দেশ স্বাধীন হলে মালাকারটোলায় ফিরে আসি। এখন আমি অসুস্থ, চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও নেই।

তিনি বলেন, আমার কোনো সন্তানও নেই। শেষ বয়সে এখন আমি চলারফেরাও করতে পারি না। তাই সরকারের কাছে আমার এই আবেদন আমাকে মুক্তিযোদ্ধা ও আমার ছোট ভাইকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। একই সঙ্গে কিছু আর্থিক সহায়তা চাই সরকারের কাছে। এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই।

শহীদ পরিবারের সদস্য বাবুল দে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজ’কে বলেন, সেই ভয়াবহ গণহত্যার পর গত ৫০ বছরেও সরকারিভাবে শহীদের স্বজনদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। শহীদের স্বীকৃতিও পাননি নিহতরা। ১২ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৯ জনের পরিবার চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। যদি সেই দিনের নিহতদের শহীদের স্বীকৃতি এবং শহীদ পরিবারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা দেওয়া হতো তবে শহীদ পরিবারের সদস্যরা কিছুটা সান্ত্বনা পেত।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যার পর পাকিস্তানি সৈন্যরা লোহারপুল এলাকার মালাকারটোলার হিন্দু মহল্লায় হামলা চালায়। সেখান থেকে ১৫ জনকে ধরে নিয়ে লোহারপুরের উপর দাঁড় করিয়ে বার্স্ট ফায়ার করে। বার্স্ট ফায়ারের সঙ্গে সঙ্গে ১২ জন মারা যান। গুরুতর আহত ৩ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হলেও দীর্ঘদিন মরণযন্ত্রনা ভোগ করে তাদেরও মৃত্যু হয়। সেই গণহত্যায় নিহত ১২ জনের মধ্যে ১১ জনই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।

নিহতরা হলেন— ড. হরিনাথ দে, ইন্দ্রমোহন পাল, বিল্পব কুমার দে, দুলাল চন্দ্র দে, লালমোহন সাহা, মনিলাল সাহা, ক্ষিতিশ চন্দ্র নন্দী, প্রাণ কৃষ্ণ পাল, বিশ্বনাথ দাস (পল্টু), জীবন ঘোষ, জীবন কৃষ্ণ দাস ও হারুণ-অর-রশীদ।

প্রতিবছর ২৭ মার্চ এলেই মালাকারটোলার শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এলাকাবাসী। ২০১০ সালে মালাকারটোলা শহীদ স্মৃতি সংসদ মালাকারটোলা মোড়ে ১২ জন শহীদের স্মরণে একটি শহীদ স্মৃতি ম্যুরাল নির্মাণ করে। প্রতি বছর এই দিনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।