ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়তি ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী, গাড়িতে ওঠাই বড় যুদ্ধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
বাড়তি ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী, গাড়িতে ওঠাই বড় যুদ্ধ পরিবহন সংকটে যাত্রীরা

ঢাকা: করোনা সংক্রমণ রোধে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে গণপরিবহন। কিন্তু অফিস-আদালত, শিল্প, কল-কারখানা খোলা রেখে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিবহন সংকটে দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

ফলে যাত্রীদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে চাপা ক্ষোভ।  

যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারে সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা খোলা রেখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ গণপরিবহনের যাত্রী অর্ধেক করে দিলে বাড়তি পরিবহনের প্রয়োজন হবে। সরকার যদি সে ব্যবস্থা করে সিদ্ধান্ত নিতো, তাহলে আজ আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।  

বুধবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর সদরঘাট, নয়াবাজার, গুলিস্তান, পল্টনমোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই বাসগুলোতে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে গুনে গুনে। ৫০ সিটের বাসে ২৫ জনের বেশি যাত্রী ওঠানো হচ্ছে না। এতে শত শত যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।  

বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাসস্ট্যান্ডে বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠছেন। অনেকেই আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রিকশা, সিএনজিতে নির্দিষ্ট গন্তব্যে গেছেন। গাড়িতে ওঠাই বড় যেন বড় যুদ্ধ।

সদরঘাট, গুলিস্তান, গাবতলী, মহাখালী, রামপুরা, বাড্ডা, শাহবাগ, নতুনবাজার, ফার্মগেট, সাভার, মিরপুর, গাজীপুর রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে হিমাচল, আজমেরী গ্লোরী, সাভার পরিবহন, বিহঙ্গ, ভিক্টর ক্লাসিক, তানজিল। এই বাসগুলোতে মাস্ক না পরলে যাত্রীদের বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না, কোনো কোনো বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতে দেখা গেছে। তবে অনেক বাসেই বর্ধিত ভাড়া ৬০ শতাংশের বেশি বা দ্বিগুণ নিচ্ছে।  

এ বিষয়ে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের কন্ডাক্টর আশিক রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দুই সিটে একজন করে যাত্রী ওঠাচ্ছি। যাত্রীরা মাস্ক না পরলে ওঠাচ্ছি না। নির্দিষ্ট করে দেওয়া অর্ধেক সিটের বেশি যাত্রী হলে নামিয়ে দিচ্ছি। ভাড়া আগের থেকে বেশি নিচ্ছি। কতো নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ৬০ টাকা নিচ্ছি। আগে কতো ছিল জানতে চাইলে বলেন, ৩০ টাকা। দ্বিগুণ কেন নিচ্ছেন? দুই সিটে একজন যাত্রী নিচ্ছি। তাহলে যাত্রীদের ডাবল ভাড়া দিতে হবে।  

বিহঙ্গ, তানজিল, সাভার পরিবহনের কন্ডাক্টরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি নিচ্ছে। বাসে দুই সিটে একজন করে ও মাস্ক ছাড়া যাত্রী ওঠানো হচ্ছে না।  

বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে তারা খুশি। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরিবহন সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। অফিস সময়ে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। তারমধ্যে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করায় বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের।
 
পরিবহনের জন্য আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করা মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গোলাম রাব্বানী জানান, সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে শত শত যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই সরকারের পরিবহন সংখ্যা বাড়ানো উচিত ছিল।  

এদিকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে সারাদেশে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।  

নতুন করে গণপরিবহনে চলাচলের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে বলা হয়েছে- ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, বিদ্যমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশের বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে, গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজর/কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকিট বিক্রি কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক পরা/ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি/হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাত্রার শুরু ও শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, বাসের ওঠার ও নামার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, গণপরিবহনের জন্য প্রযোজ্য অন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এ নির্দেশনা ৩১ মার্চ, ২০২১ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত ০২ (দুই) সপ্তাহের জন্য) বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। দীর্ঘদিন চলার পর করোনা সংক্রমণ একটু কমে এলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন থেকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত শতভাগ আসনেই যাত্রী নিয়ে চলছিলো গণপরিবহন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
জিসিজি/এমআরএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।