বগুড়া: বগুড়া শিল্পকলা একাডেমির উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার বসয় হয়েছিলো ৬৫ বছর।
বুধবার (৩১ মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে সদর উপজেলার বৃন্দাবনপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আশরাফুল ইসলাম ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার দ্বি-পাকুরিয়া ইউনিয়নের কয়াপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ৷ তার বাবার নাম ফয়েজ উদ্দীন মোল্লা, মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। তিনি শাশ্বত শাস্ত্রীয় সংগীত নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করে অতি অল্প বয়সে তার বাবা আশরাফুল ইসলামকে সংগীতে হাতে-খড়ি দেন ৷ পড়ালেখার পাশাপাশি মায়ের উৎসাহে পরিবারের সবার উৎসাহে সঙ্গীতচর্চা চলতে থাকেন এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাবা তাকে বিশুদ্ধ সংগীতের সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার পথপ্রদর্শন করেন ৷ একসময় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেওয়ার জন্য ওস্তাদ রমেন্দ্র নাথ কর্মকারের কাছে তাকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন ৷ সেখানে তিনি নিয়মিত উচ্চাঙ্গ সংগীত, নজরুল সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত রাখেন ৷ পরিবারের গ্রামোফন থাকায় সবাই কিছু না কিছু সঙ্গীতচর্চা (নজরুল সংগীত) করতেন ৷ এইচএসসি পাস করার পর বাবার আগ্রহে তাকে সংগীত বিশেষজ্ঞের সান্নিধ্যের জন্য ঢাকায় পড়ালেখা তথা সংগীতচর্চার জন্য পাঠানো হয় ৷ সেখানে তিনি বরেণ্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ওস্তাদ আক্তার-সাদ-মানি এবং ওস্তাদ ওমর ফারুকের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ৷ কয়েক বছর পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের পড়ালেখা শুরু করেন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ওস্তাদ রবিউল হোসেন এর কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং নজরুল সংগীত শিক্ষক জনাব রিয়াজ উদ্দিনের কাছে তালিম গ্রহণ করে করেছেন ৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে চাকরির সুবাদে তিনি বগুড়ায় বসবাস শুরু করেন ৷ সঙ্গীতচর্চা অব্যাহত রাখার জন্য চাকরির ফাঁকে ওস্তাদ স্বপন কুমার কুণ্ডুমহাশয়ের সান্নিধ্যে সংঙ্গীত করতে থাকেন ৷ ১৯৯২ সালে বগুড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ডিসি সাহেব তাকে আমন্ত্রণ করে উচ্চাঙ্গসংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন ৷ অতপর ১৯৯৮ সালে আরও উচ্চতর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন ৷ তিনি একাধিক উচ্চাঙ্গসংগীত সম্মেলনে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন ৷ বর্তমানে বগুড়ার বিভিন্ন সংগীত একাডেমিতে উচ্চাঙ্গসংগীত প্রশিক্ষক এবং হিসেবে ছিলেন ৷ দুই কন্যার জনক তিনি (আশা এবং ঊষা) ৷ তার সহধর্মিণী মাহফুজ ইসলাম এবং কন্যাদ্বয়ের উৎসাহী তিনি শাশ্বত শাস্ত্রীয় সংগীত নামে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একটি গ্রন্থ লিখেছেন ৷ গ্রন্থটি তিনটি খণ্ড ১০৫ রাগ সন্নিবেশিত হয়েছে ৷ তিনি সম্মিলিত সঙ্গীতশিল্পী পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং বগুড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উচ্চাঙ্গসংগীত প্রশিক্ষক এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সংগীত শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।
দাফনের আগে বুধবার সন্ধ্যায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অনার প্রদান করে বগুড়া সদর থানার পুলিশ।
তাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার ভিডিও
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
এএটি