ঢাকা: পাশাপাশি আসনে যাত্রী। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক।
বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এ চিত্র দেখা যায়।
সকাল সোয়া ১১টায় সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে উঠে দেখা যায়, পাশাপাশি আসনেই বসে আছেন যাত্রীরা। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক।
পাশাপাশি বসে থাকার বিষয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা গত ২৩ মার্চ সপরিবারে বাড়ি যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কেটেছিলাম। সে কারণে পাশাপাশি আসনেই বসে আছি।
আরেক যাত্রী আসলামুল ইসলাম বলেন, আমি আমার স্ত্রী সিলেটে যাচ্ছি। আমরা গত ২৫ মার্চ অগ্রিম টিকিট কেটেছিলাম। সে কারণেই আমাদের আসন পাশাপাশি।
সরজমিনে ট্রেনটিতে দেখা যায়, যাত্রীদের অনেকের মুখেই ছিলো না মাস্ক। আর এ মাস্ক নানা থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একেকজনের বক্তব্য একেকরকম।
এক নারী যাত্রী বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়েছে, এ কারণে মাস্ক খুলে রেখেছি। কিছুক্ষণ পর আবারও পরবো।
শাহীন নামে এক যাত্রী বলেন, ট্রেনের ভেতরে তো সমস্যা নাই। যাত্রীও কম। সেজন্য মাস্ক খুলে রেখেছি।
যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের ট্রাভেল স্যুটার শাহজাহান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পাশাপাশি যাত্রী বসছে, কারণ তারা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন। আর আমরা বারবার যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলছি। ট্রেন ছাড়ার পর আমরা চেকিংয়ে যাবো। এরপরও কোনো যাত্রীর মাস্ক না থাকলে প্রয়োজনে তাকে মাস্ক দেওয়া হবে।
ট্রেনের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের অ্যাটেনডেন্ট আব্দুল আজিম বলেন, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আসা মাত্রই আমরা জীবাণুনাশক দিয়ে ট্রেন পরিষ্কার করে ফেলেছি। সে সঙ্গে যাত্রীদের স্যানিটাইজারও দেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীরা ট্রেনের ভেতরে মাস্ক না পরলেও, প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জন্য বাধ্যতামূলকভাবেই মাস্ক পরতে হয়েছে তাদের। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখেই হান্ড মাইক নিয়ে বারবার যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন কমলাপুর স্টেশনের কর্মকর্তারা।
‘৫ এপ্রিলের আগে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়’
আগামী ৫ এপ্রিলের আগে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত ২৮ মার্চ আমাদের ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই আমরা দুই আসনে এক টিকিট বিক্রি করছি। কিন্তু তার আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে আছে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে এসব যাত্রীদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা সম্ভব নয়। তবে ৫ এপ্রিল থেকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, মাস্ক ছাড়া আমরা কাউকেই প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দিচ্ছি না। এ বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আর যারা মাস্ক খুলে ফেলছেন, তাদের মাস্ক পরার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমরা প্রতিটি ট্রেনকে জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করছি।
এদিকে, ১১ এপ্রিলের পর আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট ইস্যুর ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে নতুন নিয়ম জারি করেছে।
বুধবার (৩১ মার্চ) রেলওয়ের উপ-পরিচালক (টিসি) মো. নাহিদ হাসান খাঁন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে নতুন নিয়ম জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের মোট আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশ টিকিট একইসাথে অনলাইন, মোবাইল অ্যাপ ও কাউন্টারে যুগপৎভাবে সকাল ৮টা থেকে অগ্রিম ব্যবস্থাপনায় ইস্যু করা; আগামী ১১ এপ্রিলের পর আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা এবং আন্তঃনগর ট্রেনে ক্যাটারিং সেবা ও ট্রেনে রাত্রিকালীন বেডিং সরবরাহের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) থেকে অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে যারা অগ্রিম টিকিট কিনেছিলেন তাদের বিষয়টি শিথিলযোগ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
ডিএন/এমজেএফ