ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব

‘চোখের সামনেই জ্বলছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান’

মেহেদী নূর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
‘চোখের সামনেই জ্বলছিল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পাশেই দোকান।

দোকানের আয় দিয়ে চলতো তার সংসার। সম্প্রতি হেফাজত ও মাদরাসাছাত্রদের নারকীয় তাণ্ডবে মূহুর্তে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার রোজগারের একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি। সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব ফারুক।  

ওই দিনের বর্বর কাণ্ডের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার দোকানের সামনেই পুলিশ বসা ছিল। হরতালের পরিস্থিতি দেখে সেদিন আর দোকান খুলি নাই। ওই দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন করছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকলেও ১১টার পর থেকেই পুলিশের দিকে চওড়া হতে থাকে হামলাকারীরা। প্রথমে থানার সামনে পুলিশের একটি গাড়ি পুড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। একযোগে হামলা করতে থাকে। এর পাশেই আমার দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাউ দাউ করে কেবল জ্বলছিল। নিভানোর কোনো উপায় ছিল না। অবাক হয়ে দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছি। আমার দোকানে প্রায় ২৭ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। ’

ওমরের দোকানের পাশের ব্যবসায়ী আজিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ কতো আশা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করায়। এক তাণ্ডবে জীবনের সব স্বপ্ন তছনছ করে দিল। পুলিশকে মারতে এসে আমার দোকানে আগুনে জ্বালিয়ে দিল। আমি সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই। হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।

আরেক ব্যবসায়ী হৃদয় মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হরতালের দিন ভয়ে দোকান তালা দিয়ে বাড়িতে চলে গেছি। ফোন দিয়ে একজন জানায় বিক্ষোভকারীরা দোকানে আগুন দিয়ে দিছে। এসে দেখি কিছু নাই। সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।  

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল চললেও হঠাৎ করে চড়াও হয়ে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। এরপর পুলিশের ওপর চলে হামলা ও ভাঙচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ। মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে একটা গ্রুপ ব্যস্ত হয়ে পড়ে লুট পাটের কাজে। তখন অনেক দোকান পাটে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সরেজমিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, শহরজুড়ে আগুনে পোড়া গন্ধ। অনেক প্রতিষ্ঠানের কিছুই নেই সব পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় অনেক নথিপত্রও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব তাণ্ডবলীলা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এমন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সদর ৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।  

এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল, একইভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্যাকলাপ করা হয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই বরদাশত করা হবেনা। এবার আশ্বস্ত করছি, এবার আমরা একটা কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।