সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে সুবিধার পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভোমরা স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
রোববার (৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোমরা স্থলবন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর শুধু কাস্টমস্ ডিউটি বাবদ ১২শ’ কোটি টাকা আয় করে থাকে। ভোমরা স্থলবন্দরে প্রত্যক্ষভাবে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের মতো ভোমরা স্থলবন্দরেও পণ্য খালাসে লেবার সরবরাহের জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী লেবার সরবরাহের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পার মেট্রিক টন হিসাবে ৬৯ দশমিক ২০ টাকা হারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিল আদায় করে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের জন্য লেবার সরবরাহ না করে বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উপায়ন্ত না পেয়ে আমদানিকারকরা বাইরে থেকে লেবার নিয়ে ট্রাক প্রতি দুই হাজার টাকা দিয়ে পণ্য খালাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পণ্য খালাসে দুই বার লেবার বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গত ৩ মার্চ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে জানায়, ১ এপ্রিল থেকে ডাবল লেবার বিল কার্যকর হবে। এ উপলক্ষে ২৩ মার্চ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কৃর্তপক্ষের সচিবের উপস্থিতিতে ও বন্দরের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে একটি কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ডাবল বিল চালু না করার জন্য সচিব, জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন।
তাছাড়া ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও উপপরিচালক তাদের নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে জোর পূর্বক ডাবল বিল চালু করতে যাচ্ছেন।
এটি চালু হলে প্রতি ট্রাকে শুধুমাত্র লেবার সংক্রান্ত ব্যয় হবে ১০ হাজার ৯২০ টাকা। যা বাংলাদেশের আর কোনো বন্দরে পরিলক্ষিত হয় না। এটি আবার প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতিতে ডাবল লেবার বিল চালু করে ভোমরা বন্দরকে ধ্বংস করার পাঁয়তার করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এই বন্দরের ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে না। ফলে বন্দরটি অকার্যকর বন্দরে পরিণত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের অন্যান্য বন্দরের মতো সুযোগ সুবিধা দাবি করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমসহ আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২১
আরএ