ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিরসরাইয়ে করোনাকালে মানুষের শেষ ভরসা ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২১
মিরসরাইয়ে করোনাকালে মানুষের শেষ ভরসা ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’

ফেনী: করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনে যখন কেউ এগিয়ে আসেনি তখন মিরসরাইয়ে গঠিত হয় মানবিক স্বেচ্ছাসেবীসংগঠন ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’। গত বছরের ৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হওয়া সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা এ পর্যন্ত ৯০ জন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা ব্যক্তির দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে।

 

সংগঠনটির সেবার কার্যক্রম এরইমধ্যে ফেনী, রামগড়, সেনবাগ ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। শূন্য থেকে শুরু হওয়া সংগঠনটি বছর না পেরুতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আর্থিক সহায়তায় মরদেহ বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স কেনা, মরদেহ দাফনের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনা, স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন ও মরদেহের গোসল দেওয়ার জন্য স্থায়ী ঘর নির্মাণ করেছে।

জানা যায়, ২০২০ সালে চীনের উহান শহর থেকে যখন করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে তখন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা মানুষকে দাফন নিয়ে সারাদেশের মতো মিরসরাইতেও শঙ্কা দেখা দেয়।  

গত বছর উপজেলার ও চমানপুরে ইউনিয়নে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা এক প্রবাসীর মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায় স্বজনরা। সকাল থেকে বিকেল পর্য ন্মত রদেহ উঠানে পড়ে ছিল। পরবর্তীসময়ে 'শেষ বিদায়ের বন্ধু’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা গিয়ে মরদেহ দাফন করে আসে। মরদেহ দাফনের জন্য উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ১৮টি ইউনিট গঠিত হয়।  

প্রতি ইউনিয়নে ৭ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। মোট ১৮টি ইউনিটে ২১৬ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। মৃত ব্যক্তির গোসল ও দাফন-কাফন এবং আর্তমানবতার কল্যাণে যেখানে বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ সমাজের স্বেচ্ছাসেবীরা যুক্ত হন।

জানা যায়, বর্তমানে এ সংগঠনের চলমান সেবার মধ্যে রয়েছে, করোনা পজিটিভ, বেওয়ারিশ এবং যেকোনো মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা, মরদেহ ধোয়ানোর ব্যবস্থা, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও অক্সিজেন সার্ভিস, এতিম, দরিদ্র ও অসচ্ছলদের সহায়তা, দুর্যোগকালীন ত্রাণ সহায়তা, প্রধান কার্যালয়ে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর জন্য অত্যাধুনিক গোসলখানা, ফ্রি কাফনের কাপড় বিতরণ। সংগঠন পরিচালনায় সর্বোচ্চ পরিষদ, স্থায়ীপরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদ রয়েছে।

করোনাকালীন মৃত ব্যক্তির গোসল ও দাফন-কাফন ছাড়াও আর্তমানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এ সংগঠন। শুরু থেকে করোনাকালীন মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন ও নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষকদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়, ১শ হাফেজ শিক্ষার্থীকে জুব্বা ও পায়জামা দেওয়া হয়, নারীদের বোরকা দেওয়া হয়, ক্লিফটন গ্রুপের সৌজন্যে করোনা সচেতনতায় মাস্ক ও টিশার্ট বিতরণ করা হয়, প্রিমিয়াম ট্রেড অ্যান্ড এক্সেসরিজের সৌজন্যে ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ সংগঠনের লোগো খচিত টিশার্ট বিতরণ করা হয়।  ইতোমধ্যে বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনকারী সংস্থা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম শাখার পরামর্শে সংগঠনের কার্যক্রম সময়োপযোগী করার পরকিল্পনা নেওয়া হয়ছে।

‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা ও মিরসরাই প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আলম জানান, একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি খবর চোখ পড়ে। করোনা সন্দেহে টাঙ্গাইলের সখীপুরে বনে মাকে ফেলে গেলেন সন্তানেরা, ফেলে যাওয়ার সময় তারা বলে মা, তুমি এই বনে এক রাত থাকো। কাল এসে তোমাকে নিয়ে যাব’ এ কথা বলে ৫০ বছর বয়সী মাকে শাল-গজারিরবনে ফেলে যান তাঁর সন্তানেরা।  

তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সন্তানেরা এমনটা করেন। এ খবরটি পড়ে সারা রাত বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এছাড়া সংবাদমাধ্যমে রশি বেঁধে গোসল ছাড়া মরদেহ কবরে রাখার দৃশ্য দেখে আরো খারাপ লাগে। সারারাত এসব ভেবে খুব কষ্ট হয়। পরদিন সকালে উঠে ওয়ালেস দারুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা শোয়াইবকে ফোন করে মরদেহ দাফনের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করার প্রস্তাব দিলে হুজুর সঙ্গে সঙ্গে মরদেহ গোসল, জানাজা ও দাফন-কাফনে সহযোগতিার আশ্বাস দেন।  

সংগঠনের প্রধান উদ্যোক্তা আরো জানান, প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিশেষভাবে স্মরণ করি এ সংগঠনের সব ধরনের অর্জনের মূলে যাদের অবদান, যারা জীবনের ঝুঁকি, পরিবারের বাঁধা, সামাজিক হুমকি উপেক্ষা করে দিনরাত সময়ে অসময়ে মরদেহ গোসল, দাফন-কাফন করেছেন তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।