ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যমুনার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি এখন গলার কাঁটা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
যমুনার বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি এখন গলার কাঁটা

সিরাজগঞ্জ: সাত বছর আগে সংযোগ সড়ক যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হলেও নদীর মাঝখানে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যর একটি গার্ডার সেতু। আর এই সেতুটিই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌপথে চলাচলকারী মানুষগুলোর।

দুর্ঘটনা এড়াতে বর্ষা মৌসুমের আগেই সেতুটি অপসারণের দাবি এলাকাবাসীর।  

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের মেটুয়ানী এলাকায় যমুনা নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের অন্যতম এ নৌপথটির মাঝখানে অবস্থান করা সেতুটির কারণে ঘটেছে বেশ কয়েকটি নৌ দুর্ঘটনাও।  

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফা, আওয়ামী লীগ নেতা এহিয়া খানসহ স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বাঘুটিয়া ও খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ কররে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ সড়কের মাঝখানে ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যর এই গার্ডার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের বন্যায় সাড়ে চার কিলোমিটার পাকা সড়ক সম্পূর্ণ নদীগর্ভে চলেও গেলেও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সেতুটি।  

স্থানীয়রা আরও জানান, এক সময়ের পাকা সড়কটি এখন নৌপথে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের মিটুয়ানী থেকে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের শম্ভুদিয়া গ্রাম পর্যন্ত নৌ সার্ভিস চালু থাকে। প্রতিদিন ১২টি নৌকায় কয়েক হাজার মানুষের চলাচল এ রুটে। যাত্রীবাহী নৌকা ছাড়াও পণ্যবাহী নৌকাও চলাচল করে এ নদীপথ দিয়ে। বর্ষা মৌসুমে অকেজোঁ সেতুটি ডুবে থাকার কারণে এ রুট দিয়ে অনেক ঝূঁকি নিয়েই চলাচল করে নৌকাগুলো।  

স্থানীয় নৌকার মাঝি মোকাদ্দেস আলী বাংলানিউজকে বলেন, নদীর মাঝে সেতুটি ডুবে থাকে। আর সেখানে থাকে তীব্র স্রোত। অপরিচিত কোনো নৌকা কোনো কিছু না বুঝে সেই স্রোতের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাই বর্ষা আসার আগেই সেতুটি অপসারণ করা দরকার। প্রায় পাঁচ বছর আগে এ সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকাডুবি হয়ে নয় জনের মৃত্যু হয়।  

এ বিষয়ে খাসপুকুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু দাউদ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সেতুটি দু’টি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বর্ষাকালে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সেতু। সেতুটি যেহেতু কোনো কাজে আসছে না, সেহেতু মানুষের জানমাল রক্ষায় এটি অপসারণ করা অত্যন্ত জরুরি।  
 
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাহহার সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ বছর আগে একটি বড় নৌ দুর্ঘটনা এই সেতুটির কারণেই হয়েছিল। এরপর আরও দু-একটি দুর্ঘটনাও ঘটে গেছে। অব্যবহৃত গার্ডার সেতুটি অপসরণের জন্য আমরা এরইমধ্যে সওজ বিভাগের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও এখনো অপসারণ করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে ব্যস্ততম এ নৌরুটে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হবে যাত্রীদের।  

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, মিটুয়ানী এলাকায় অকেজোঁ অবস্থায় পড়ে থাকা সেতুটি অপসারণের জন্য সওজ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেতুটি বিক্রি করার পর অপসারণ করা হবে।  

সওজ বিভাগ সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ওই সেতুটি অপসারণের ব্যাপারে লিখিত একটি আবেদন পেয়েছি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি অপসারণে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad