ঢাকা: ‘করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েও মৃত্যু হতে পারে, আবার না খেতে পেয়েও আমাদের মৃত্যু হতে পারে। দুই দিকেই মৃত্যুর ভয় আছে।
রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল চালক ইয়াকুব আলী একটা মৃদু হাসির সঙ্গেই কথাগুলো বলছিলেন। তিনি মোবাইল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার চালক।
উত্তরা ফায়দাবাদ এলাকায় স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বসবাস করেন ইয়াকুব আলী। আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। গত বছর মহামারি করোনার পরবর্তী প্রভাবে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। তবে হাল ছাড়েননি, নিজের মোটরসাইকেলে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা দিতেন তিনি। লকডাউনে অ্যাপ বন্ধ থাকায় চুক্তিতে যাচ্ছেন।
ইয়াকুব আলী বলেন, করোনার সংক্রমণ যে ভয়াবহ তা আমি বুঝি। কিন্তু কি করবো। করোনার ভয়ে তো ঘরে বসে থাকতে পারবো না। আমার কাছে ১০ দিন বসে খাওয়ার টাকা নেই। তাই মৃত্যুর ঝুঁকি কাঁধে নিয়েই সড়কে বের হয়েছি। কয়েকটা ট্রিপ পেলেই এক দিনের আহার তো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি নিজেরা সচেতন থাকি আর সবসময় মাস্ক পরিধান করি তবে কিছুটা সেভ থাকতে পারবো। আমাদের বের হওয়ার কারণে পুলিশ মামলা দিচ্ছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে উপার্জন করতে নেমেছি, ভাই দিন শেষে খাবার তো খেতে হবে। ’
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, রাজলক্ষী, জসিম উদ্দিন মোড়, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী এলাকায় সড়কের পাশে ইয়াকুব আলীর মত অনেকেই ভাড়ায় চালানোর জন্য মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা সবাই জীবনের তাগিদেই বের হয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রুখতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৮ দিনের লকডাউন চলছে। আজ তার ৭ম দিন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি আর মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তির দিকে। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান বিধি-নিষেধ তথা লকডাউন আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার।
লকডাউনের সময় জনমানুষদের ঘরে থাকার জন্য বলা হলেও কারণে অকারণে তারা বাইরে বের হচ্ছেন। এদিকে সড়কে যানবাহন ও জনমানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করেছে পুলিশ। বিভিন্ন চেকপোস্টে পথচারীদের কাছে মুভমেন্ট পাস চেক করছে পুলিশ।
এদিকে লকডাউনের প্রথম দুই/তিন দিন চেকপোস্টগুলোতে ভালো তল্লাশী হলেও সপ্তমদিনে তা একেবারেই ঢিলেঢালা।
সরেজমিনে রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর, হাউজব্রিল্ডিং, জসিম উদ্দীন, বিমানবন্দর খিলক্ষেত, বনানী এলাকায় বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। এদিকে আগের দিনগুলোর তুলনায় সপ্তম দিনে সড়কে যানবাহনের পরিমাণও অনেক বেড়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোটরসাইকেলে দু'জন চড়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। পুলিশ জরিমানা করলেও কোনো সচেতনতা চালকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে সিএনজি ও প্রাইভেটকার সড়কে আগের তুলনায় অনেক বেশি চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় মার্কেট, শপিংমল বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
এসজেএ/এমআরএ