ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ডিজিটাল জীবন-০৩

গ্রামীণ জীবন সহজ করেছে ইউডিসি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫২ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
গ্রামীণ জীবন সহজ করেছে ইউডিসি ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টার থেকে সনদ গ্রহণ করছেন এক উপকার ভোগী

ফেনী: ‘এখন আর দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারম্যানের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এসে অপেক্ষা করতে হয় না, পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে এলেই পাওয়া যায় দরকারি সনদ ও নানা ধরনের সেবা’। কথাগুলো বলছিলেন আফসানা আক্তার নামে এক নারী।

ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা হয় তার সঙ্গে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে এসেছিলেন তার নবজাতক ছেলের জন্ম সনদ নিতে। ডিজিটাল সেবায় উপকৃত এ নারী মনে করেন গ্রামীণ জীবনকে আগের চেয়ে অনেকগুন সহজ করে দিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি)।

জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সেবা নিতে প্রতিনিয়তই আসছেন ডিজিটাল সেন্টারে। জন্ম-মৃত্যু সনদ থেকে শুরু করে হাসপাতালের তথ্য, চাকরির খবর, বিজ্ঞপ্তি এবং আবেদন সবই মিলছে এখানে।

জেলার দাগনভূঞাঁ থানার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজটাল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কাজ করছেন তিনজন তরুণ। ডেস্কটপ, প্রিন্টার, ল্যাপটপসহ তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ নানা উপকরণ রয়েছে সেখানে। সেবা গ্রহীতার ভিড়ও লক্ষণীয়। এ ডিজিটাল সেন্টারটির উদ্যোক্তা শেখ ফরিদ বলেন, ‘সরকার আমাদের উপকরণ দিয়েছে। আমরা তা দিয়ে পরিশ্রম করে কাজ করছি- নাগরিকদের খুব সামান্য মূল্যে আমরা সেবা দিতে পারছি, অর্থনৈতিকভাবে ইউডিসির মাধ্যমে আমরা নিজেরাও স্বাবলম্বী হচ্ছি।

এ উদ্যোক্তা জানান, ডিজিটাল সেন্টারগুলোর মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাংকিং সেবাও পাচ্ছেন। সরকার উদ্যোক্তাদের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট দিয়েছেন, এর মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া, পাঠানো এবং বিদেশ থেকে টাকা আসাসহ সবই হচ্ছে।

ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আশা আফিয়া বেগম বলেন, তার বড় ছেলে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকেন। অন্য ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে তিনি দেশে থাকছেন, আগে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতো, ফেনী শহরের ব্যাংকে গিয়ে ছেলের পাঠানো টাকা তুলতে হতো-এখন আর তা করতে হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদের এজেন্ট ব্যাংক থেকেই টাকা তোলা যাচ্ছে।

ওই সেন্টারটির উদ্যোক্তা আলী হোসেন জানান, তার ডিজিটাল সেন্টারের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কোনো অংশেই অন্য সাধারণ ব্যাংক থেকে কম নয়। বিদ্যুৎ, বিল, গ্যাস বিল, টাকা জমা করা, উঠানো এবং বিদেশ থেকে টাকা আনা নেওয়া সবই হচ্ছে এখানে।  

জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে কথা হয় পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিজিটাল সেন্টার গুলো হওয়াতে তাদের কাজের চাপও কিছুটা কমেছে- সাধারণ নাগরিকদের এখন আর জন্ম সনদ কিংবা মৃত্যু সনদের জন্য চেয়ারম্যানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না, ডিজিটাল সেন্টারের ফরমেটে স্বাক্ষর দেওয়া থাকে সেখান থেকেই সাধারণ মানুষ তাদের দরকারি জিনিসটি পেয়ে যাচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, আধুনিক সেবায় এ সেন্টারগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। অনলাইনে দরকারি সব সেবা পাওয়ায় মানুষের জীবনটাই যেন সহজ হয়ে গেছে।

ফেনী জেলা তথ্য অফিসার রেজাউল বারী মনির বলেন, সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারগুলো গ্রামীণ জীবনকে অনেক অগ্রসর করে দিয়েছে। প্রান্তিক জনপদেও মানুষগুলোর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে সরকারের সবচাইতে আধুনিক ডিজিটাল সেবাগুলো।  

তিনি বলেন, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলাজেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সব ইউনিয়ন ডিজিটাল  সেন্টার (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন।
 
ইউডিসির মাধ্যমে সহজে, দ্রুত ও কম খরচে সরকারি ও বেসরকারি সেবা পাবার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমানের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে ।  

সারাদেশে সাত হাজারেরও অধিক ডিজিটাল সেন্টারে মিলছে ২৯০টিরও বেশি নাগরিক সেবা বলেও জানান জেলা তথ্য অফিসার রেজাউল বারী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।