ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সহ‌যো‌গিতার অজুহা‌তে কি‌শোরী‌কে প্রবাসীর ব্ল্যাক‌মেইল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
সহ‌যো‌গিতার অজুহা‌তে কি‌শোরী‌কে প্রবাসীর ব্ল্যাক‌মেইল

ঢাকা: হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার এক কলেজছাত্রীকে পারিবারিক অস্বচ্ছলতার সুযোগে সহায়তার ফাঁদ পাতেন এক প্রবাসী। মাঝে-মধ্যে আর্থিক সহায়তার নামে গড়ে তোলেন প্রেমের সম্পর্ক।

আর এ সুযোগে আপত্তিকর ছবি বাগিয়ে শুরু করেন ব্ল্যাকমেলিং।

একপর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পান ওই তরুণী। শুধু পুলিশের ফেসবুক পেজে একটি বার্তা থেকেই তৎপরতা শুরু হয়। অবশেষে অভিযুক্ত ওই প্রবাসীর কাছ থেকে মুচলেকা আদায়সহ সতর্ক করা হয়।

পুলিশ জানায়, হবিগঞ্জের এক কলেজছাত্রী টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রবাসীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। লাঙ্গলকোটের বাসিন্দা ওই প্রবাসী বিবাহিত হলেও বিষয়টি গোপন করে ওই তরুণীর পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে আর্থিক সহায়তা করেন। প্রেমের অভিনয় করে তরুণীর সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়াতে চেষ্টা করেন। এক সময় তরুণীর বিশ্বাস ও দুর্বলতার সুযোগে আপত্তিকর ছবি নিতে থাকেন।

কিছুদিন পরর ওই তরুণী বিয়ের জন্য চাপ দিলে ওই প্রবাসী এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে ওই প্রবাসী বিবাহিত ও দেশে তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে জানতে পেরে সরে যেতে চান তরুণীও। কিন্তু এবার তরুণীর পাঠানো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য করেন। এমনকি ওই মেয়ের নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন। কোনো উপায় না পেয়ে ওই তরুণী আত্মহত্যারও সিদ্ধান্ত নেন। এমন সিদ্ধান্তের একপর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠান। সে অনুযায়ী তাকে কাউন্সিলিং করার পাশাপাশি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে বার্তাটি প্রবাসী যুবকের নিজ নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. বখতিয়ার চৌধুরীকে পাঠানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, বাংলাদেশ পুলিশে এখনও অনলাইন জিডি ও মামলার বিষয়টি চালু হয়নি। সে হিসেবে তরুণী ও তার অভিভাবককে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট আসতে হতো। কিন্তু মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের বিশেষ রেফারেন্সে তরুণীর কাছ থেকে অনলাইনে একটি লিখিত অভিযোগ নেন ওসি নাঙ্গলকোট।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুঞ্জয়ের অভিভাবকদের থানায় ডাকা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় ওই তরুণী ও তার পক্ষ অনলাইনে থানার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার ভয়ে প্রবাসী ও তার পরিবার বেশ চাপে পড়েন। বিদেশ থেকেই সে তার এলাকার জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে ক্ষমা চান। বিদেশে তার সঙ্গে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশির উপস্থিতিতে তিনি একটি মুচলেকার সই করে তা বাংলাদেশে পাঠান। তরুণীর সব তথ্য ডিলিট করার প্রমাণাদি পাঠান। ফেসবুক আইডি বন্ধ করেন। পরে তরুণীর পরিবার সার্বিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পুলিশকে আইনি ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ করেন।

পরে বাংলাদেশ পুলিশকে ওই তরুণী ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তায় লিখেন, স্যার, আপনাদের ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। আপনাদের এ নিঃস্বার্থ সহযোগিতা কখনও ভুলবো না। আপনারা আমাকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২১
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad