ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা রবিউলের গল্প 

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা রবিউলের গল্প 

খুলনা: ‘দলে ছিলাম ১১ জন। কাছিকাটা পারাদুনি এলাকার খালের পার দিয়ে বনের ভেতরে মধু সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলাম।

হঠাৎ করে বাঘটা দেখলাম তেড়ে আসছে আমার দিকে। বাঘ দেখে একটা গাছের আড়ালে পালাই। কিন্তু দ্রুত গতিতে বাঘটি এসে আমাকে ফেলে দিয়ে কামড়ে ধরে। ঘাড়সহ মাথায় দাঁত বসিয়ে দেয় হিংস্র বাঘটি। এছাড়া পিঠ ও হাতে নখের আঁচড় দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতের সৃষ্টি করে। আব্বা ছাড়া সবাই ভয়ে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। কেবলমাত্র আব্বাই সাহস নিয়ে লাঠি দিয়ে বাঘটিকে মেরে আমাকে ছাড়িয়ে আনেন’।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে আসা রবিউল ইসলাম (২৬) সে দিনের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার এভাবে বর্ণনা করেন বাংলানিউজের কাছে।  

রবিউল শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের মো. আব্দুল হালিম শেখের ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছোট।  

গত ১ এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে পাস নিয়ে তিনি, তার বাবা ও সঙ্গীরা সুন্দরবনে মধু ভাঙতে যান। গত ১৩ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে সুন্দরবনের কাছিকাটা এলাকায় মধু আহরণকালে বাঘের আক্রমণে গুরুতর আহত হন তিনি।

রবিউল বলেন, এখনও বাঘের আতঙ্ক আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সেই থেকে ঘুমাতে পারি না। চোখ বুঝলেই বাঘ আতঙ্ক। আক্রমণের ১০-১২ দিন ভয়ে প্রচণ্ড জ্বর ছিলো। এখন কিছুটা সুস্থ। ক্ষতও প্রায় শুকিয়ে এসেছে। ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে এখন সময় কাটছে। আক্রমণের শিকার হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য কিছু সহযোগিতা পেয়েছি।  

‘বাঘে মানুষে লড়াই’ শেষে প্রাণে রক্ষা মৌয়াল রবিউল বলেন, আমি বুঝতেই পারিনি ওখানে বাঘ ছিল। হঠাৎ করে সব হয়ে গেছে। মধু ভাঙাগার পাস রয়েছে আমাদের। প্রায় ১০ বছর ধরে মধু ভাঙতে বনে যাই। এবারই প্রথম বাঘের মুখোমুখি হই।

বাঘের মুখ থেকে ছেলেকে কিভাবে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেন এম প্রশ্নের জবাবে রবিউলের বাবা আব্দুল হালিম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের জন্য জীবন বাজি রেখে বাঘকে লাঠি দিয়ে আঘাত করি। একপর্যায়ে বাঘ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। রবিউলের ঘাড়সহ মাথায় দাঁত বসিয়ে দেয় বাঘটি। এছাড়া পিঠ ও হাতে নখের আঁচড় দিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতের সৃষ্টি করে। বড় আকারের বাঘ। এ বাঘটি মানুষ ধরা স্বভাবের। বাঘের মুখ থেকে রক্ষা করার পর বরিউলের প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়।  

কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় রবিউলকে প্রথমে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে বাড়িতে এনে কবিরাজি চিকিৎসা করা হচ্ছে।  
কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবেদন করেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সহযোগিতা করেছেন। রবিউলের শরীরের ক্ষত শুকিয়ে গেছে। কিন্তু গাল একটু বেঁকে গেছে। কথা বললে মুখ বেঁকে যায়। অনেক রক্তক্ষরণের কারণে শরীর দুর্বল রয়েছে। যার কারণে ছোট দেশি মুরগি ও কবুতরের বাচ্চা খাওয়াতে হচ্ছে।  

সাহসী আব্দুল হালিম বলেন, ৪৫ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করি। ২০০৯ সালে সুন্দরবনে আমার আপন ছোট ভাই ও ফুফাতো ভাইকে আমার সামনে একটি হিংস্র বাঘ আক্রমণ করে। আমি চিৎকার করে লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসতে না আসতেই তাদের দুই জনকেই বাঘ মেরে ফেলে পালায়। পরে দুই ভাইয়ের মরদেহ আমি গ্রামে নিয়ে আসি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।