ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। প্রতিবছরই অর্থমন্ত্রীরা যে বাজেট পেশ করেন তার ওপর ভিত্তি করেই আগামী এক বছরে দেশের অর্থনীতির চিত্র পাওয়া যায়।
কিন্তু যে বাজেট নিয়ে এত কথা, সে বাজেটের কথা কিন্তু উল্লেখ করা নেই সংবিধানে।
ওপরের কথাগুলো হেঁয়ালীর মতো শোনা গেলেও এটাই সত্য। বাংলাদেশের সংবিধানে সরাসরি বাজেট বলে কিছু নেই। বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংবিধানের ৮৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক অর্থ-বৎসর সম্পর্কে উক্ত বৎসরের জন্য সরকারের অনুমিত আয় ও ব্যয়-সংবলিত একটি বিবৃতি (এই ভাগে ‘বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি’ নামে অভিহিত) সংসদে উপস্থাপিত হইবে।
৮৭ (২) বলা হয়েছে, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতিতে পৃথক পৃথকভাবে (ক) এই সংবিধানের দ্বারা বা অধীন সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়রূপে বর্ণিত ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, এবং (খ) সংযুক্ত তহবিল হইতে ব্যয় করা হইবে, এইরূপ প্রস্তাবিত অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রদর্শিত হইবে এবং অন্যান্য ব্যয় হইতে রাজস্ব খাতের ব্যয় পৃথক করিয়া প্রদর্শিত হইবে।
বাজেটের বিষয়ে যেহেতু সংবিধনে নেই, সেহেতু বাজেট পাসের বিষয়েও কিছু উল্লেখ নেই। বাজেট পাস বলতে আমরা যা বুঝি তাকে অর্থ বিল পাস হিসেবে বলা হয়েছে।
অর্থবিলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সংবিধানের ৮১(১)-এ বলা হয়েছে, ‘অর্থবিল’ বলিতে কেবল নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের সকল বা যে কোনো একটি সম্পর্কিত বিধানাবলী-সংবলিত বিল বুঝাইবে: (ক) কোন কর আরোপ, নিয়ন্ত্রণ, রদবদল, মওকুফ বা রহিতকরণ; (খ) সরকার কর্তৃক ঋণগ্রহণ বা কোন গ্যারান্টিদান, কিংবা সরকারের আর্থিক দায়-দায়িত্ব সম্পর্কিত আইন সংশোধন; (গ) সংযুক্ত তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ, অনুরূপ তহবিলে অর্থপ্রদান বা অনুরূপ তহবিল হইতে অর্থ দান বা নির্দিষ্টকরণ; (ঘ) সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় আরোপ কিংবা অনুরূপ কোন দায় রদবদল বা বিলোপ; (ঙ) সংযুক্ত তহবিল বা প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব বাবদ অর্থপ্রাপ্তি, কিংবা অনুরূপ অর্থ রক্ষণাবেক্ষণ বা দান, কিংবা সরকারের হিসাব-নিরীক্ষা; (চ) উপরি-উক্ত উপ-দফাসমূহে নির্ধারিত যে কোন বিষয়ের অধীন কোন আনুষঙ্গিক বিষয়।
সংবিধানের ৮১(১)-এ বলা হয়েছে, কোন জরিমানা বা অন্য অর্থদণ্ড আরোপ বা রদবদল, কিংবা লাইসেন্স-ফি বা কোন কার্যের জন্য ফি বা উসুল আরোপ বা প্রদান কিংবা স্থানীয় উদ্দেশ্যসাধনকল্পে কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন কর আরোপ, নিয়ন্ত্রণ, রদবদল, মওকুফ বা রহিতকরণের বিধান করা হইয়াছে, কেবল এই কারণে কোন বিল অর্থবিল বলিয়া গণ্য হইবে না।
অর্থবিল পাসের বিষয়ে সংবিধানের ৮১(৩)-এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য তাঁহার নিকট পেশ করিবার সময়ে প্রত্যেক অর্থবিলে স্পিকারের স্বাক্ষরে এই মর্মে একটি সার্টিফিকেটে থাকিবে যে, তাহা একটি অর্থবিল এবং অনুরূপ সার্টিফিকেট সকল বিষয়ে চূড়ান্ত হইবে এবং সেই সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
সংবিধানে না থাকলেও বাজেট আছে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে। বিধির ১১১(১)-এ বলা হয়েছে, সংবিধানের ৮৭ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যেক অর্থ বৎসরের বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি বা প্রত্যেক অর্থ-বৎসর সম্পর্কে উক্ত বৎসরের জন্য অনুমিত আয় ও ব্যয় সংবলিত একটি বিবৃতি (যাহা অতঃপর বাজেট নামে উল্লিখিত হইবে) সংসদে উপস্থাপন করিতে হইবে।
বাজেট কে পেশ করবেন সেটি উল্লেখ করে বিধির ১১১(২)-এ বলা হয়েছে, সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে অর্থ মন্ত্রী যেরূপ উপযোগী মনে করেন সেই আকারে বাজেট সংসদে পেশ করিবেন।
বাজেট উত্থাপনের দিন বাজেট নিয়ে কোন আলোচনা না করার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে বিধির ১১২-এ। এতে বলা হয়েছে, বাজেট উপস্থাপনের দিনে উহার আলোচনা না হওয়া বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক দেয়া বক্তৃতা ব্যতীত ঐ দিনে বাজেট সম্পর্কে অন্য কোন আলোচনা চলিবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
ডিএন/এজে