হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সুতাং ও বেলেশ্বরী নদীতে মাত্র হাটু পরিমাণ পানি থাকা ও দূষণের কারণে পূণ্যস্নানে ব্যাপক দুর্ভোগ হয়েছে। এক সময় হাজার হাজার মানুষ এখানে পূণ্যস্নানে এলেও এখন নদীর পানি দূষিত হওয়ায় আসেন অল্পসংখ্যক মানুষ।
সম্প্রতি কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে সুতাং, বেলেশ্বরী ও কানাই এই তিন নদীর মোহনায় গঙ্গাস্নান হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান হয়েছে খালে পরিণত হওয়া বেলেশ্বরী নদীতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুতাং নদীর পুরোটাই শিল্পবর্জ্যে দূষিত। বেলেশ্বরী নদীও বাদ পড়েনি দখল-দূষণের কবল থেকে। উভয়পাড় দখলের কারণে কমে গেছে নদীগুলোর প্রস্থ। কমেছে নদীর পানিও। যে পরিমাণ পানি আছে তাও কাঁদাযুক্ত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে স্নানে নেমে সবাইকে উঠতে হয়েছে ময়লাযুক্ত কাপড় নিয়ে। শিল্পবর্জ্যের দুর্গন্ধও ছিল দুর্ভোগের কারণ।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অমিত ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এবারও বেলেশ্বরী গঙ্গা মন্দিরে গঙ্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য বছর অসংখ্য নারী-পুরুষ জড়ো হলেও এবার করোনা মহামারি, মেলা আয়োজন না করা এবং নদীর পানি স্বাস্থ্যসম্মত না হওয়ায় ভিড় কম হয়েছে। এরপরও হাজারখানেক নারী-পুরুষ এসে পূণ্যস্নান করে গেছেন। অনেকে তাদের প্রয়াত বাবা-মায়ের তর্পণ শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেছেন। পরে কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
পূণ্যস্নানে আসা গীতা দাশ ও তার স্বামী জ্যোতি লাল দাশ বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে প্রতি বছর পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতাম। কিন্তু এবার নদীর পানি দূষিত হওয়ায় শুধু দু’জন এসেছি। দুর্গন্ধযুক্ত হাটু পানিতে কোনরকম পূণ্যস্নান সম্পন্ন করলাম।
গঙ্গাপূজা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানিক চন্দ্র দেব বাংলানিউজকে জানান, লাখাই উপজেলার বেলেশ্বরী নদীর তীরে গঙ্গামন্দিরে শিব-গঙ্গা দু’জন দেবতার প্রতীমা রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে তিন নদীর মোহনায় গঙ্গাজল প্রবাহিত হয়। তাই এ তিথীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে পূণ্যস্নান করতে আসেন। একইসঙ্গে দু’জন দেবতার পূজাও করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কতশত বছর ধরে এখানে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তা স্থানীয় কেউ বলতে পারবেন না। এক সময় সেখানে লাখো মানুষের ভিড় হতো। পূণ্যস্নান শেষে মেলায় কেনাকাটা ও উৎসব করে বাড়ি ফিরতেন সবাই। কিন্তু এখন দখল-দূষণের কারণে নদীগুলোর অবস্থা খারাপ হওয়ায় অল্পসংখ্যক মানুষ আসেন। নদীগুলোকে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানান।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বাংলানিউজকে বলেন, আগে সুতাং নদীতে ত্রিমোহনায় পূণ্যস্নান হতো। কিন্তু সুতাং নদীর পানি শিল্পবর্জ্যে পুরোপুরি দূষিত হওয়ায় বেলেশ্বরী নদীতে স্নান হয়েছে। বেলেশ্বরী নদীর পানিও দূষিত। হাটু পরিমাণ পানিতে পূণ্যস্নানে আগতদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আগামী বছর এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
এমআরএ