ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

খেতে সুস্বাদু পাহাড়ি ফল ‘রসকো গুলো’

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২১
খেতে সুস্বাদু পাহাড়ি  ফল ‘রসকো গুলো’

রাঙামাটি: মানুষ ও পশু-পাখির খাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম হলো ফল। ফল খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ নিশ্চয় নেই।

মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও ফলমূল খেয়ে থাকে। ফলের মিষ্টি ঘ্রাণ যে কাউকে মাতোয়ারা করে।  

রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে জন্ম নেওয়া এমন একটি ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে; যে ফলটির প্রাতিষ্ঠানিক কোনো নাম জানা নেই স্থানীয়দের। অথচ মানুষ ফলটি খাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। যেমন সুস্বাদু, তেমনি বাজারে দামও বেশ চড়া। কৃষি বিভাগও ফলটি সম্পর্কে তথ্য দিতে অপারগ। তাহলে ফলটি সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহের শেষ থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।



দেখতে অনেক জাম বা ছোট জলপাইয়ের মতো ফলটি পাকার আগে হালকা হলুদ রঙের থাকলেও পাকার সঙ্গে সঙ্গে ফলটি লাল বা কিছুটা জাম বর্ণ ধারণ করে। দাঁত দিয়ে কামড়ে কিংবা ছুরি দিয়ে ফালি করে কেটে খোসাটা ফেলে ভেতরের বিচিটা চুষে খেতে হয়। বিচিটা এতো লাল থাকে; অনেকটা মানুষের রক্তের মতো। যা দেখে স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের যে কোনো মানুষ ফলটি খেতে ভয় পেতে পারে। টক-মিষ্টির মিশ্র স্বাদের ফলটি চুষে খেতে এতো মজা যে না খেলে বোঝা যাবে না। তবে একটা সমস্যা আছে, ফলটি খাওয়ার পর জিহ্বা এবং ঠোঁট লাল হয়ে যায়। তাই খাওয়ার পর ব্রাশ করতেই হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুনো ফলটির বাণিজ্যিক কোনো চাষাবাদ করা হয় না। পাহাড়ি বাসিন্দারা গহীন পাহাড়ের পাদদেশে অন্যান্য গাছের সঙ্গে এ ফলের গাছটি রোপণ করেন। আনুমানিক রাঙামাটিতে ফলটির শতাধিক গাছ রয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। রোপণের চার থেকে পাঁচ বছরের মাথায় গাছে ফুল আসে। এরপর ফল পাওয়া যায়। গাছে ফলটি থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে।

পাহাড়ি হাটের দিনগুলোতে কেজি আকারে ফলটি বিক্রি করা হয়। এক কেজি ফলের দাম প্রায় ৩০০ টাকা। মে-জুন মাসে ফলটি পাহাড়ি হাটে বিকিকিনি চলে। দাম যতই থাকুক; পাহাড়ি এবং স্থানীয় বাঙালিরা ফলটি কিনে বাড়িতে যান।

জেলা শহরের বনরূপা হাটে ফলটি কিনতে আসা মিতিলা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে ফলটি খাই। আজও কিনে নিচ্ছি। তবে নাম জানা নেই। আমরা বলি, ‘রসকো গুলো’। তবে স্থানীয় বাঙালিদের কাছে ‘রক্ত গোটা’ কিংবা ‘রাক্ষুসি গুলো’ নামে পরিচিতি।



বনরূপা হাটে ফলটি বিক্রি করতে আসা জেলা সদরের বন্ধুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা সুমিত চাকমা বাংলানিউজকে জানান, আমার দাদু আমাদের নিজস্ব পাহাড়ে গাছটি লাগিয়েছিলেন। আমার বাবা গাছটিতে উৎপাদিত ফল বিক্রি করেছেন। এখন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আমিও বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, মৌসুমে একটি গাছে কয়েক মণ ফল পাওয়া যায়। বাজারে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দামও ভালো পাচ্ছি।

পাহাড়ের আলোকচিত্রী রকি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে ফলটি খেয়েছি, অনেক সুস্বাদু। পাহাড়ের পাদদেশে ফলের গাছটি রোপণ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গাছটির আয়ুষ্কাল সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে গাছটি রোপণের চার-পাঁচ বছরের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। গাছটি লম্বায় জলপাই গাছের সমান হয়ে থাকে।  

অনেকে এ ফলটিকে লুকলুকি মনে করেন। এটি আসলে লুকলুকি না অন্য কোনো ফল, তা অবশ্য স্থানীয় কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় কৃষি বিভাগ অতীতে বুনো ফলটি নিয়ে কোনো গবেষণা না করলেও আমি এ অঞ্চলে আসার পর দেখলাম বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই সম্প্রতি ফলটি বাজার থেকে কিনে এর একটি স্যাম্পল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। তারা ফলটির গুণাগুণ, নাম নির্ধারণ করবেন। সেখান থেকে তথ্য পেলে আমরা স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা সাজাবো, এ ফল নিয়ে কি করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।