ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভারী বৃষ্টিপাতে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের আতঙ্ক 

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
ভারী বৃষ্টিপাতে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের আতঙ্ক 

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি পুরোটা শহর দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের উপর। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে জনবসতি সব গড়ে উঠেছে পাহাড়কে কেন্দ্র করে।

ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে পাহাড় ধসের আতঙ্কে লেগে থাকে।

১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। বাঁধের ফলে ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ১৮ হাজার পরিবারের এক লাখ মানুষ বাস্ত্যচুত হয়। যে কারণে বাস্ত্যচুতরা মানুষেরা পাহাড়ে এসে জনবসতি গড়ে তোলে। পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত শহরায়ণ এবং বহুতল ভবন নির্মাণ করার কারণে ঝুঁকিটা বহুগুণ বেড়ে যায়। একটু ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে পাহাড় ধসের আতঙ্ক শুরু হয়।

২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙমাটি শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের বড় ধরনের প্রাণহানী ঘটেছিল। বেসরকারি হিসেবে মতে প্রাণহানীর সংখ্যা আরও বেশি। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, বান্দরবান সড়ক। ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওর্য়াক। সারাদেশের সঙ্গে ৯ দিন বিচ্ছিন্ন থাকে রাঙামাটি। এছাড়া ২০১৮ নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে ১১ জন এবং ২০১৯ সালে কাপ্তাই উপজেলায় ৭ জন প্রাণ হারায় পাহাড় ধসে।

পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যু ঘটলেও পাহাড়ের নিচে বসবাস কমেনি বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। পাহাড় দখল করে পুনরায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে লোকজন। যে কারণে বর্ষা মৌসুমের সময় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ না করতে নিষেধ করে জেলা প্রশাসন। সতর্কতা স্বরূপ সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হলেও নিষেধাজ্ঞা মানে না লোকজন। শহরের রূপনগর, শিমুতলী, ভেদভেদীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে ববসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। বর্ষা এলে ওই এলাকায় বসবসারত মানুষেরা আতঙ্কে দিন কাটায়। তারপরও জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে মানুষকে সরে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। শহরে মাইকিং করে প্রচারনা শুরু করেছে রাঙামাটি তথ্য অফিস ও রেড ক্রিসেন্টের যুব স্বেচ্ছা সেবকরা।

শিমুলতলী পাহাড়ে বসবাসকারী মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। তাই মৃত্যুর ভয় উপক্ষো কওে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করি।

একই এলাকার মো. রমজান আলী বাংলানিউজকে জানান, মরলেও আমাদের এখানে থাকতে হবে। আমরা গরীব মানুষ। তবে সরকার যদি আমাদের নিরাপদ স্থানে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করা ছেড়ে দিবো।

রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সালের পাহাড় ধসের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা পৌর এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। যাতে করে পাহাড় ধসের কারণে প্রাণহানি আর না ঘটে। ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে গিয়ে যাতে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যায় তার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে অনেকেই সচেতন হলেও তাদের অবস্থান থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস গড়ে তুলছে। এতে করে ভারী বৃষ্টিপাত হলে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে রাঙামাটি পৌর শহরে ৩৩টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সচেতনামূলক সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দেয়াসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার জন্য ২৯টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আর কোথাও যদি পাহাড় ধসের দুর্ঘটনা ঘটে তার জন্য ৯টি ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙামাটি শহরসহ নয়টি উপজেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।