ঢাকা: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এডিসি ডিভিশনের (ঢাকা) সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি। এই সুবাদে নামে-বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এটিএম কার্ড বানিয়ে সহযোগীদের সরবরাহ করতেন।
সেইসব কার্ডে বিভিন্ন সময় এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করিয়ে লেনদেনের তথ্য মুছে দিতেন। একইসঙ্গে কার্ড ব্যবহারকারী ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে টাকা তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করতেন। লেনদেনের তথ্য না থাকায় ব্যাংক থেকে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা আবারো সমন্বয় করা হতো।
ব্যাংকের আইটি অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে এটিএমের ইলেট্রনিক জার্নালের তথ্য পাল্টে ৬৩৭টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৩৬৩টি লেনদেন করিয়েছেন রনি। অভিনব এই পন্থায় তিন বছরে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ত্যাগ করেন তিনি।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে রনির স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে।
গ্রেফতাররা হলেন—সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেনী হাসান ওরফে মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এডিসি ডিভিশনের সিনিয়র অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন মীর মো. শাহারুজ্জামান ওরফে রনি। ওই পদে কর্মরত থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রীসহ অন্যান্য গ্রেফতার সহযোগীদের দিয়ে এটিএম বুথে লেনদেন করিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
লেনদেনের পর এটিএমের ইলেক্ট্রনিক জার্নালের তথ্য এমনভাবে পরিবর্তন করে দিতেন যাতে পরবর্তী সময়ে এটিএম থেকে টাকা না পাওয়ার অভিযোগ সঠিক বলে মনে হয়। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম মনিটরিং রোস্টার টিমে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রায় তিন বছরে তথ্য পরিবর্তন করে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন রনি।
তার নেতৃত্বে ২০১৮ সাল থেকে এই অভিনব প্রতারণার কাজটি চলছিল। বর্তমানে রনি দেশের বাইরে আত্মত্মগোপন করায় তাকে গ্রেফতারে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, কয়েক ধাপে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রথম ধাপে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কোনো অনুমোদিত এজেন্টের মাধ্যমে স্যালারি বা অন্যান্য অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। এরপর আবেদনকৃত অ্যাকাউন্ট ও এটিএম কার্ড তৈরি হওয়ার পর গ্রাহকের কাছে পাঠানোর জন্য স্ব-স্ব এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হতো। এজেন্টদের কাছ থেকে ডিবিবিএল এটিএম কার্ডগুলো টাকার বিনিময়ে গ্রাহককে না দিয়ে ওই চক্রের কাছে হস্তান্তর করতো ওই চক্র।
পরের ধাপে চক্রটি টাকা এটিএম বুথ থেকে তোলার সময় আইটি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। এরপর টাকা তোলার পর লেনদেনের তথ্য জার্নাল থেকে মুছে দেওয়া হতো বা টাকা উত্তোলনের আগ মুহূর্তে এটিএম বুথের সঙ্গে সার্ভারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আইটি অফিসার জার্নালে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে সাকসেসফুল মেসেজকে আনসাকসেসফুল মেসেজে রূপান্তরিত করে দেন। ফলে ওই মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হতো না।
পরের ধাপে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করতেন যে, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় তার ব্যালান্স কেটে নেওয়ার পরও তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা পাননি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি দেখেন, কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিনা এবং হয়ে থাকলে সৃষ্ট জানাল সাকসেসফুল কিনা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার যখন দেখেন যে, টাকা উত্তোলনের জন্য কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিন্তু জার্নালটি আনসাকসেসফুল তখন আইটি অফিসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অ্যাকাউন্টে আবার ব্যালান্স সমন্বয় করে দিতেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২১
পিএম/এমজেএফ