ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ওআইসিকে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
ওআইসিকে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

ঢাকা: জাতিগত নিধনের শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক এবং ইসরায়েলী দখলদারদের হাতে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বুধবার (১৬ জুন) বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ওআইসির সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ক সম্মেলনে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

ওআইসির আয়োজনে এবারের সম্মেলনের মূল্য প্রতিপাদ্য ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন: ওপেনিং নিউ হরাইজন’।

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সারা বিশ্ব যখন একটি ধ্বংসাত্মক মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং মহামারিতে অগণিত মানুষের জীবন ও জীবিকার অভূতপূর্ব ক্ষতি হয়েছে। সেই সময়ে ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনেরা মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তারা (ফিলিস্তিনবাসী) আমাদের কাছ থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টা ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ কামনা করছে।


তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর ইসরায়েলী দখলদার বাহিনীর বারবার হামলার নিন্দার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা জানায় বাংলাদেশ। ভাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশ অব্যহত সমর্থন পুর্নব্যক্ত করছে।

রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফেরা নিশ্চিতে করতে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ওআইসি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করার অনুরোধ করছি। যাতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ যেন তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে, সুরক্ষা এবং মর্যাদা নিয়ে ফিরতে পারে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশ, ওআইসি এবং বিশ্বের জন্য ক্রমাগতভাবেই উদ্বেগ তৈরি করে চলেছে।  সিএফএম রেজুলেশন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার অভিযোগ আনা এবং আন্তর্জাতিক আদালতের মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্থায়ী কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সবাই অবগত আছেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং ওআইসি মহাসচিব ২০২০ সালের জুলাইয়ে সব সদস্য রাষ্ট্রের কাছে একটি যৌথ চিঠি ইস্যু করেন। সেখানে সব সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে একটি স্বেচ্ছাসেবী তহবিল গঠনের কথা বলা হয়, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি এ মামলার ব্যয় মেটানো হবে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানের হারানো নেতৃত্ব ফিরে পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এক সময় মুসলমানরা নেতৃত্ব দিয়েছিল, মুসলমানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে জীবনে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অন্বেষণে বিনিয়োগ, সমন্বিত ও নিবেদিত হয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দ্রুত চতুর্থ শিল্প বিল্পবের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে হবে।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে তুলে ধরে তিনি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, খাদ্য এবং কৃষি খাতে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সমুদ্র অর্থনীতির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ নিউক্লিয়ার ক্লাবে প্রবেশ করেছি।

রাষ্ট্রপতি দারিদ্র বিমোচন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

ওআইসি দেশগুলোকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে উৎকর্ষ অর্জনে  ৫টি পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

ওআইসির প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সঙ্গে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক সহযোগিতা, আইডিবির অর্থায়নে হাইটেক শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে কর্মপ্রক্রিয়া, নেটওয়ার্ক ও সহযোগিতা উন্নয়ন, বিস্তৃত বাণিজ্যিক কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময় করার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।

ওআইসির এ সম্মেলনে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভ, ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
এমইউএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।