ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের মৎস্য খাত যাতে বিপন্ন অবস্থায় না পড়ে সেজন্য যৌক্তিক, বাস্তবতাপূর্ণ ও বিজ্ঞানসম্মত প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে মৎস্য অধিদপ্তর এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাস্তবায়নাধীন ‘কমিউনিটি বেজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিসারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নানা কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। প্রচলিত ও অপ্রচলিত সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ করে খাবারের সমৃদ্ধিসহ বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্য গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ আহরণ প্রকল্পসহ একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতির প্রতিকূলতা যাতে আমাদের ধ্বংস করে দিতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য মৎস্য খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ খাতের সম্প্রসারণ ও গুণগত মানে বিকাশ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বের জন্য প্রয়োজন। কারণ বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গোটা বিশ্বকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। সে জায়গা থেকে সমগ্র বিশ্বের প্রয়োজনেই মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায় না থাকলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য ছোট ছোট রাষ্ট্র এর কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ভার্চ্যুয়াল লিডার সামিটে বিশ্বকে সমন্বিত ও সমভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য একটি তহবিল রাখার কথা বলেছেন। বিশ্বপরিমণ্ডলে একটি সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত পদক্ষেপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিশ্ব নেতারা উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তিনি বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, সাহস ও বিচক্ষণতা দেখিয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুপারিশ দিয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ ও এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকার চারটি উপজেলায় এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার পাঁচটি উপজেলায় উল্লিখিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কর্মকর্তা ও চাষি প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, জলবায়ু সহিষ্ণু মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কাঁকড়া ও গলদা হ্যাচারি পরিচালনায় পরামর্শসেবা দেওয়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় জনসাধারণের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২১
জিসিজি/আরবি