আমিনবাজার থেকে: করোনা সংক্রমিত এলাকা নওগা, রাজশাহী, খুলনার মানুষ বিভিন্ন অজুহাতে প্রবেশ করছেন রাজধানীতে। ঢাকায় সংক্রমণ রোধে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না লকডাউন জেলার মানুষের প্রবেশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে আমিন বাজার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
লকডাউন জেলা নওগাঁ থেকে ভেঙে ভেঙে আমিনবাজার এসেছেন মীরা রানী। ছেলে, মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে যাবেন মিরপুর-১৪ নম্বর। মীরা রানী বাংলানিউজকে বলেন, নওগাঁ থেকে প্রাইভেটকারে করে চান্দুরা পর্যন্ত এসেছি। এরপরে বাসে করে হেমায়েতপুর পর্যন্ত এসেছি। হেমায়েতপুর থেকে হেঁটে আমিনবাজার পর্যন্ত আসলাম। লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাস্তায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নওগাঁ থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত আসতে আমার এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। অন্য সময় এত টাকা খরচ হতো না। দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে পরিবারের সবাই মিলে বাসায় পৌঁছে যেতাম।
নওগাঁ থেকে আমিনবাজার এসেছেন ইদ্রিস আলী। লকডাউন এলাকা থেকে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়ি চলে না, অনেক কষ্ট করে আমিন বাজার পর্যন্ত এসেছি। প্রয়োজন থাকলে আসবো না তো কি করবো?
কলেজ ছাত্র মো. শামীম অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি মিরপুর বাঙলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। আজকে আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার তারিখ ছিল। আমি হেমায়েতপুর থেকে পায়ে হেঁটে কলেজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে এসেছি। আবার মিরপুর থেকে হেঁটে হেঁটে আমিনবাজার পর্যন্ত এসেছি। গাড়ি ভাড়া যে যেভাবে পারছে সেভাবেই নিচ্ছে। সড়কে চলছে নৈরাজ্য। প্রশাসন সড়কে তেমন কোনো ভূমিকাই রাখছে না। আমরা এই আংশিক লকডাউন চাইনা। সর্বাত্মক লকডাউন চাই। যাতে কেউ ঘর থেকে বের হতে না পারে। যেন সবকিছু বন্ধ থাকে।
হেমায়েতপুর থেকে হেঁটে-হেঁটে আমিনবাজার এসেছেন চাকরিজীবী সুমন। তিনি যাবেন নীলক্ষেত। সুমন বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউনের সাধারণ জনগণের ভোগান্তি। বড়লোকের প্রাইভেটকার ঠিকই চলে। কিন্তু গণপরিবহন চলে না। গরিব আর মধ্যবিত্তরাই লকডাউনে পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় আমার অফিস যেতে প্রতিদিন দেরি হয়। অফিসে বসের কাছে প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হচ্ছে। আমরা যে বেতন পাই, এতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে চলতে পারি না। এটা কি সরকার বোঝেনা? লকডাউন কি শুধু গরিব মানুষের জন্য?
আমিনবাজারে কর্তব্যরত সাভার ট্রাফিক, টিআই রবিউল বাংলানিউজকে বলেন, আমিনবাজারে যেসব গণপরিবহন আসছে সেই বাহনগুলোকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এখান থেকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইনকামিং গাড়ির চাপ থাকায় এখানে একটু জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা রাস্তার দু'পাশ পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি। যেসব পরিবহন সরকারি আইন অমান্য করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এর আগে, সোমবার (২১ জুন) করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলের বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ জেলাগুলোতে সার্বিক কার্যাবলী (জনসাধারণের চলাচলসহ) ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর কারণে ঢাকা থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে না এবং কোনো দূরপাল্লার বাস ঢাকায় প্রবেশও করতে পারছে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২১
এমএমআই/এমআরএ