রাজশাহী: কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে এসেছে রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার আলোচিত পৌর মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে। নিজেকে ডন মনে করতেন এ পৌর মেয়র।
মেয়রের অবৈধ অস্ত্রাগার থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, ৭.৬৫ পিস্তলের চারটি ম্যাগজিন, ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউণ্ড তাজা গুলি, ৭.৬৫ পিস্তলের চারটি গুলির খোসা, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার গান, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি। এছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১০ গ্রাম গাঁজা, সাত পুরিয়া হেরোইন ও ২০ পিস ইয়াবা। এদিকে মেয়রের ওই বাড়ি থেকে ১৮ লাখ টাকার সই করা চেক এবং নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। পৌর মেয়রের বাসায় নগদ প্রায় কোটি টাকা ও এত অবৈধ অস্ত্র কীভাবে এলো আর কীভাবে তিনি এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে গোটা রাজশাহী জুড়ে।
মেয়র মুক্তার আলী নিজেকে মনে করতেন এলাকার ডন। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাতে মদ খেয়ে একজন কলেজ শিক্ষককে মারধর করেন মুক্তার। সেই অভিযোগে আগেই থানায় মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় তাকে আটক করতে গিয়ে তার বাড়িতে পাওয়া গেল ছোটখাটো একটি অস্ত্রাগার। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি মাসুদ হোসেন বলেন, জেলা পুলিশের অভিযানে মেয়র মুক্তারের বাড়ি থেকে অস্ত্র, গুলি, মাদক ও প্রায় এক কোটি টাকাসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (৭ জুলাই) ভোরে রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে এসব অস্ত্রও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মেয়র মুক্তার আলী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার স্ত্রী মোসাম্মদ জেসমিন আক্তার (৪০) ও মেয়রের দুই ভাতিজা সোহান আলী (২৫) এবং শান্ত ইসলামকে (২৩) আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তার লোকজন নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। এ সময় ভয়ে মজনু বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারধর শুরু করেন। এ সময় ছেলে ও তার স্ত্রী মজনুকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে মেয়র তাদেরও মারধর করে আহত করেন।
তিনি আরও বলেন, মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিরোধী পক্ষের নির্বাচনে কাজ করেছিলেন বলেই তার ওপর হামলা করেন মেয়র ও তার লোকজন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী (৪৫) ও তার সহযোগী সাবেক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আঙ্কুরের (৩২) নাম উল্লেখ করে এবং তিন থেকে চারজন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
এসপি মাসুদ বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদের ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি করার সময় এসব অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদক, নগদ টাকা এবং মেয়রের সই করা চেক উদ্ধার করা হয়।
এসপি মাসুদ হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনায় মেয়র মুক্তার আলী পালিয়ে গেলেও তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না এবং উদ্ধার করা টাকার কোনো জবাব তারা দিতে না পারায় তা জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় মেয়রের স্ত্রী জেসিমিন ও দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় সহকারী অধ্যাপক মজনু মেয়রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও দুই পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছেন। এ মামলায় মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও দুই ভাতিজা শান্ত ইসলাম এবং সোহান আলীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মেয়র মুক্তারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর গ্রেফতার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি নজরুল।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
এসএস/আরআইএস