ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভোলাহাটে করোনাকালে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
ভোলাহাটে করোনাকালে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ এই বাড়িতেই কোচিং করানো হয়। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র বিক্রি ও কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।  

অভিযুক্ত শিক্ষক ভোলাহাট উপজেলার তেলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহা. সেলিম রেজা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলার ১৬৮ জন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের অনুলিপি, অভিযোগকারী শিক্ষকগণ, স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকসূত্রে জানা যায়, সহকারী শিক্ষক সেলিম রেজার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের থেকে বিভিন্ন অযুহাতে অর্থ আদায়, বিদ্যালয়ের পুরাতন দরজা-জানালা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।  

এছাড়াও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন এই শিক্ষক। নিজ কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতেও নিজ বাড়িতে কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।  

জানা যায়, করোনাকালীন নিজ বাড়ির দোতলায় সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং বিকেলে আরও ২-৩টি মিলে দৈনিক ৬-৭টা ব্যাচ পড়াচ্ছেন শিক্ষক সেলিম রেজা। কোচিংয়ের সময় কারো মুখে মাস্ক থাকে না, এমনকি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কোচিং পরিচালনা করছেন তিনি।
 
রোববার (১৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির নিচে শিক্ষার্থীদের প্রায় ২৫টি সাইকেল রয়েছে। বাড়ির দ্বিতীয় তলায় কোচিং চলছে। ভেতরে যেতে চাইলে বাধা দেন ও প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না বলে জানান, সহকারী শিক্ষক সেলিম রেজা ও তার স্ত্রী মোসা. ইজ্জাতুন নেসা। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। উল্টো দরজা বন্ধ করে দেন।

তবে তার স্ত্রী ইজ্জাতন নেসা বলেন, ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের কোচিং চালানোর অনুমতি দিয়েছেন, তাই কোচিং চালাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোলাহাটের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, গত কয়েক বছর থেকে অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে বদলি বাবদ বিভিন্ন পরিমাণে টাকা আদায় করেছেন সেলিম রেজা। শিক্ষা অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ করে জেলার বাইরে বদলি আটকাতে ৫০ হাজার ও উপজেলার বাইরে বদলি আটকাতে ৪০ হাজার টাকা নেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, শুনেছি সে (সেলিম রেজা) নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত হয় না। ১০-১৫ দিন পর এসে একেবারে হাজিরা খাতায় সই করে দেয়।

রাসেল আহমেদ নামে ওই কেচিংয়ের এক ছাত্রের বাবা বলেন, তার স্কুলে পড়া ছেলে-মেয়েদের নিজের কোচিংয়ে পড়ার জন্য নানাভাবে চাপ দেন। এমনকি তার কোচিং সেন্টারের ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে যায়। শুনেছি নিজের কোচিংয়ের ছেলে-মেয়েদের এগিয়ে রাখতে অবৈধ এই কাজ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে তেলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. রিজিয়া খাতুন বলেন, এসব বিষয়ে কিছু জানি না এবং সেলিম রেজার বিরুদ্ধে স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।

অন্যদিকে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল জানান, করোনাকালীন সময়ে কোচিংয়ের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।