ঢাকা: ফকির আলমগীর তার গানের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।
শনিবার (২৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত ফকির আলমগীরের নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ফকির আলমগীর শুধুমাত্র একজন গণসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন না, তিনি চিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের গণসঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনেক কালজয়ী গান।
তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে গণআন্দোলনের ইতিহাসে তার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ফকির আলমগীরের চলে যাওয়া মানে একজন কিংবদন্তীর প্রস্থান। ফকির আলমগীর একদিনে জন্ম হয় না, বহু দশকের প্রচেষ্টায় একজন ফকির আলমগীর তৈরি হয়েছে। তার হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের সঙ্গীত অঙ্গনের জন্য, গণসঙ্গীত অঙ্গনের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মহমুদ চৌধুরী বলেন, ফকির আলমগীর গানে গানে বাংলাদেশের মা ও মাটির কথা বলতেন। তার ‘মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম’ গানের মধ্য দিয়ে সম্মান দিয়ে গেছেন। এ দেশকে, এ মাকে ভালোবাসার জন্য যা করে গেছেন তার চিন্তা-ভাবনা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, তার গাওয়া ‘জন হেনরি', ‘নেলসন মেন্ডেলা’ গানের মাধ্যমে তাদের বাংলার মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। সংস্কৃতিকে তিনি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষ ও তার অধিকারের কথা গানে গানে তুলে ধরার মানুষকে আমরা হারালাম। তার যে পথ চলা, তার যে কর্ম সেটা যদি আমরা ধারণ করতে পারি তাহলেই এটা আমাদের জাতির জীবনে পাথেয় হয়ে থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, ফকির আলমগীর শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের গণসঙ্গীত শিল্পের জগতে একটি অন্যন্য সাধারণ নাম। তিনি গণমানুষের সঙ্গীত পরিবেশনে যে অনন্য অবদান রেখেছেন তার জন্য তিনি সব সময়ই চির স্বরণীয় হয়ে থাকবেন। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের তিনি শব্দ সৈনিক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, গণমানুষকে সম্পৃক্ত করে যেকোনো সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিণতিতে নেওয়ার যে ধরনের গান তিনি গেয়েছেন তাতে মনে স্থান তৈরি করেছেন।
গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ফকির আলমগীর যুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষ যখন দুঃখ, দুর্দশায় তখন গানের মাধ্যমে আশা জাগিয়েছেন। সে আমার চেয়ে বয়সে ছোট, আমি তার অকাল মৃত্যুতে মর্মাহত।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ফকির আলমগীর। এরপর তার মরদেহ হাসপাতালের হিমাঘরে ছিল। সেখান থেকে শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে বাদ জোহর খিলগাঁও মাটির মসজিদে দ্বিতীয় নামাজের জানাজা শেষে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সময় ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২১
ডিএন/এইচএমএস/আরবি