ঢাকা: সরকারি মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, সাংবিধানিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে ভূমিকা সন্তোষজনক। ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রকাশে ভূমিকা উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে প্রায় সব দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) তথ্য প্রকাশে ভূমিকা অসন্তোষজনক। এনজিওগুলোর তথ্য প্রকাশের চর্চা ও দৃষ্টান্তের ঘাটতি রয়েছে। স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমন দাবি করেছে। এসময় টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৩৯টি এনজিও; মোট ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ওপর ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি। সার্বিকভাবে নমুনায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৯২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট রয়েছে, ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কোনো ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং এনজিওদের ২০ শতাংশের কোনো ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি।
নমুনায় অন্তর্ভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক (৬৭ শতাংশের ওপর) স্কোর পেয়েছে; প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্কোর উদ্বেগজনক।
প্রথম স্থানে সার্বিকভাবে ৪২ স্কোর (৮৪ শতাংশ) পেয়ে যুগ্মভাবে রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় স্থানে মহিলা ও শিশু বিয়ক মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুগ্মভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেতু বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় - মাদ্রাসা বোর্ড, শিল্প মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সার্বিকভাবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ স্কোর (৮ শতাংশ) পেয়েছে আন্তঃবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ। কোনো এনজিওই প্রথম ১০ অবস্থানে নেই। যুগ্মভাবে বেশ কয়েকটি করে প্রতিষ্ঠান একই স্কোর পেয়ে একই র্যাংকিকে অবস্থান করছে।
অন্যদিকে কোনো এনজিওই সন্তোষজনক স্কোর পায় নি; ৯৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনজিওর স্কোর উদ্বেগজনক। এনজিওদের মধ্যে প্রথম ১০টি অবস্থানে রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রাপ্ত স্কোর ৭ থেকে ২২ এর মধ্যে।
সর্বোচ্চ স্কোর ২২ (৪৪ শতাংশ) পেয়ে প্রথম স্থানে আছে একটি জাতীয় পর্যায়ের এনজিও কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশাল ট্রান্সফরমেশন, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা আহসানিয়া মিশন ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র। প্রথম ১০টি অবস্থানের মধ্যে ৬টি আন্তর্জাতিক এনজিও, এবং তালিকার বাকি সব ওয়েবসাইট জাতীয় পর্যায়ের এনজিওর।
সার্বিকভাবে দেখা যায় অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এনজিওর থেকে তুলনামূলক ভালো স্কোর পেয়েছে। অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং প্রকাশিত তথ্যের ধরন খুব কাছাকাছি। কিন্তু এনজিওর ক্ষেত্রে এরকম একক কোনো ডিজাইন/ফরমেট দেখা যায় না। এছাড়া এখনও এনজিওর ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট তথ্যসমূহ প্রকাশের চর্চা ও দৃষ্টান্তের ঘাটতি লক্ষণীয়।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে স্কোরিং করা হয়েছে। নির্ধারিত তিনটি ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত মোট ২৫টি নির্দেশকে (তথ্যের ব্যাপ্তিতে ১৯টি, প্রবেশগম্যতায় ৪টি ও উপযোগিতায় ২টি নির্দেশক) তথ্য প্রকাশের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্যেক নির্দেশকের জন্য পূর্ব নির্ধারিত শর্ত বা কোড অনুযায়ী (উচ্চ = ২; মধ্যম = ১; নিম্ন = ০ স্কেলে) স্কোর দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে মোট স্কোর পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের প্রযোজ্য সবগুলো নির্দেশকের স্কোর যোগ করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মোট স্কোর পাওয়ার জন্য যোগ করা হয়েছে সবগুলো নির্দেশকের স্কোর।
প্রতিষ্ঠানের মোট সর্বোচ্চ স্কোরের (২৫টি নির্দেশকে সর্বোচ্চ মোট স্কোর ৫০) সাপেক্ষে প্রাপ্ত স্কোরের শতকরা হার বের করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো নির্দেশক প্রযোজ্য না হলে সেই নির্দেশকে কোনো স্কোর দেওয়া হয়নি এবং তা মোট স্কোর ও শতকরা হার থেকে বাদ রাখা হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সকল নির্দেশকের ভর বিবেচনায় সার্বিক স্কোর নিরূপণ করা হয়েছে। এভাবে প্রাপ্ত চূড়ান্ত স্কোরের শতকরা হারের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানের গ্রেডিং (সন্তোষজনক, অপর্যাপ্ত, উদ্বেগজনক)।
টিআবির পরিচালিত গবেষণার বিষয়বস্তু হচ্ছে-তথ্য অধিকার আইনানুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন।
পুরো প্রতিবেদনটি দেখাতে ক্লিক করুন:http://banglanews24.com/public/userfiles/files/AAT-1/RTI%20Ranking_%20ES_Bangla_050821.pdf
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
ইইউডি/এএটি