পঞ্চগড়: এক সময়ের সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত, অসহায় মানুষগুলোর ছিল না নিজস্ব স্থায়ী কোনো ঠিকানা। খাস জমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙা ঘরে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতে হতো তাদের।
কিন্তু মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সারাদেশের মতো দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলায় ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের জন্য বিষেশ উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ২৪১৬টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়ছে। প্রত্যেকটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে থাকবে না, প্রত্যেক ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পাবে পাকা ‘ঘর’ মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসন। কেবল শুধু গৃহহীন-ভূমিহীনই নয়, সরকারের এসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা।
বর্তমান সরকারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণে বাসস্থানসহ নানা উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে এসব মানুষের জীবনমান। তবে এর মধ্যে বাদ পড়েনি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাবেক ছিটমহলবাসী অসহায় ভিক্ষুকরাও। এক সময় এই অসহায় মানুষগুলোর ছিল না কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই, পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর ভাঙা কুটিরে শীত, বৃষ্টিকে সঙ্গী করে টানা-হেঁচরার মধ্যে জীবনযাপন করতে হতো তাদের। কষ্ট লালিত সে সব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে সরকার। তাদের অসহায় জীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে একের পর নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের নতুন পাকা ঘর।
খবর নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণ করা ২৪১৬টি ঘরের মধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা পেয়েছে প্রায় ১৩০টি ঘর, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পরিবার পেয়েছে প্রায় ১২০টি ঘর, অবশিষ্ঠ ঘর পেয়েছে ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবারগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের এইসব ঘর এখন তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। ছিন্নমূল আশ্রয়হীন কষ্ট সহ্য করা মানুষগুলোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটে। ভূমিহীন-গৃহহীন, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, আদিবাসী ও ছিটমহলবাসী মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা অনেক সুখে-আনন্দে স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করছে বলে জানায় উপকারভোগীরা।
বোদা উপজেলায় ঘর পাওয়া উপকারভোগী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর লক্ষিরাম হাসদা (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমরা অনেক কষ্টে দিন যাপন করেছি। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেওয়ায় এখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার (বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের) বর্তমান রজমহলের বাসিন্দা আবু ইব্রাহীম (৭০) বাংলানিউজকে বলেন, ৬৮ বছরের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে এখন আমরা সরকারের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি।
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন ঘর পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত অসহায় এই মানুষগুলোর ঘরের কষ্ট দূর হয়েছে। শেষ বয়সে সরকারের দেওয়া অনেক সহযোগিতা পেয়ে এখন তারা ভালো আছে।
পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বাংলানিউজকে জানান, সরেজমিনে গিয়ে ভূমিহীন-গৃহহীন ব্যক্তিদের তালিকা করে যাচাই বাছাইয়ের পর মনোনীত করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর দেওয়া হয়েছে। আর যারা বাদ পড়েছেন পরে তাদেরও ঘর দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীসহ বিলুপ্ত ছিটমহলের ২৪১৬টি উপকারভোগীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহারের ঘরের চাবি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২১
আরএ