ঢাকা: আফগানিস্তান পরিচালনার জন্য তালেবানরা তাদের নিজস্ব ইসলামিক ধাঁচের সরকার বাস্তবায়নে অনড় এবং এটিই বর্তমান সংঘাতের একটি প্রধান কারণ বলে মনে করেন হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অব ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ডা. এম মুস্তাফা মাস্তুর।
তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান ইস্যুতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আগের মতো শক্তিশালী নয় এবং আশা করি ভবিষ্যতে এটি আরও জোরদার হবে।
কাবুল থেকে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের একটি ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন ডা. এম মুস্তাফা মাস্তুর।
সোমবার (০৯ আগস্ট) নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাউথ এশিয়ান ইন্সিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) উদ্যোগে ‘বর্তমান আফগান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারটি আয়োজিত হয়।
ওয়েবিনারে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা আফগানিস্তানে চলমান শান্তি আলোচনাকে স্বাগত জানাই এবং জাতিসংঘকে তার প্রচেষ্টা আরও বাড়াতে বলি। আমরা আমাদের দক্ষিণ এশীয় এবং সার্ক সদস্য রাষ্ট্র আফগানিস্তানকে আর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ চলমান শান্তি আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে আফগান জনগণের নিজস্ব অধিকারকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশ আফগানিস্তানের উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার জন্য জোর দিচ্ছে এবং পারস্পরিক সুবিধার জন্য আফগানিস্তানকে সব দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ কাবুলে দূতাবাস পুনরায় চালু করবে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব মোমেন।
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল এবং বাংলাদেশে বর্তমান আফগান সঙ্কটের ভূ -রাজনীতি এবং পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেন ওয়েবিনারের মূল বক্তা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা অতীতের মতো বিরূপ প্রভাব ফেলবে, যা এই অঞ্চলের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন তালেবানের উগ্র এবং নমনীয় আচরণ উভয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেন। তালেবানরা তেলের দাম এবং ইসলামিক বিবাহে মোহরানার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আফগান জনসাধারণের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করছে এবং তিনি এর প্রভাব বিশ্লেষণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আফগানিস্তানে মানবিক ও উন্নয়ন সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফারুক আহমেদের। তিনি বলেন, দুর্বল শাসন ব্যবস্থা এবং ব্যবসা করার উচ্চ খরচসহ নিরাপত্তা সেখানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক বলেন, যদিও পাকিস্তান, ভারত, ইরান সবাই আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের দৌড়ে আছে, কিন্তু ন্যাটো এবং মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে তৈরি শূন্যতা পূরণে চীনের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। জাতীয় আফগান সরকার, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে এবং ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই এসসিও সদস্য হওয়ায় এটি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে।
ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, যদিও তালেবানের উত্থান পাকিস্তানের জন্য প্রাথমিক কৌশলগত লাভের দিকে ইঙ্গিত করে, কিন্তু পাকিস্তান আরও বিশৃঙ্খলা এবং আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীদের আগমনের ঝুঁকিতে আছে যদি সেখানে আরেকটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
আফগান জনগণের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি আফগান লোকগান বাজানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, ব্যাংকক, ইতালি, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২১
এমজেএফ/